অমুসলিমদের দাওয়াত না দিলে মুসলিমদের অপরাধ হবে কি
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীমকাফেরদেরকে ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দিলে কি মুসলিমরা অপরাধী হবে?অনুবাদক:জাকের উল্লাহ আবুল খায়েরসম্পাদক:আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়াপ্রকাশনায়:www.islamqa.info-ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদসংক্ষিপ্ত বর্ণনা:এ ফতওয়াটিতে কাফেরদেরকে ইসলামের দিকে দাওয়াত না দেয়াতে মুসলিমদের গুনাহ হবে কিনা সে বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।সংযোজন তারিখ:2013-06-24শর্ট লিংক:http://IslamHouse.com/430737কাফেরদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত না দেওয়াতে মুসলিমরা গুনাহগার হবে কিনা?প্রশ্ন:পিস টিভি চ্যানেলের একাধিক বক্তা ও দা‘য়ী আমাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যে সব অমুসলিমের সাথে তুমি উঠ-বস কর এবং যাদেরকে তুমি চেন, তাদেরকে যদি তুমি ইসলামের দিকে দাওয়াত না দাও, তারা কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে যে, তুমি তাদের ইসলামের প্রতি দাওয়াত দাও নি। এ কথাটি কতটুকু সঠিক? যদি সঠিক হয়, তাহলে এর প্রমাণ কি? যাদের সাথে আমার রাস্তা-ঘাটে দেখা-সাক্ষাত হয় তাদের সবার ক্ষেত্রে এ কথাটি প্রযোজ্য, নাকি যাদের আমি ভালোভাবে চিনিশুধু তাদের সাথে বিষয়টি খাস? আমাদের সহকর্মী, প্রতিবেশী এবং রাস্তায় চলার সময় যাদের সাথে দেখা হয়, তারা সবাই কি এ সব লোকদের আওতায় পড়ে, যাদের ইসলামের দিকে দাওয়াত দেওয়া জরুরী ও ওয়াজিব? উত্তর:আলহামদু লিল্লাহএক-মনে রাখ,আল্লাহর দিকে মানুষকে দাওয়াত দেয়া সার্বিক দিক বিবেচনায় ওয়াজিব ও ফরযে কেফায়া। যদি কোন একজন দা‘ঈ, আলেম ও তালেবে ইলম দাওয়াতের এ মহান দায়িত্ব পালন করে, তবে অন্য মুসলিমরা দায় মুক্ত হবে।আল্লাহ তা‘আলা বলেন,﴿۞وَمَا كَانَ ٱلۡمُؤۡمِنُونَ لِيَنفِرُواْ كَآفَّةٗۚ فَلَوۡلَا نَفَرَ مِن كُلِّ فِرۡقَةٖ مِّنۡهُمۡ طَآئِفَةٞلِّيَتَفَقَّهُواْ فِي ٱلدِّينِ وَلِيُنذِرُواْ قَوۡمَهُمۡ إِذَا رَجَعُوٓاْ إِلَيۡهِمۡ لَعَلَّهُمۡ يَحۡذَرُونَ ١٢٢ ﴾ ]التوبة: ١٢٢[ “আর মুমিনদের সকলের একসাথে অভিযানে বের হওয়া সংগত নয়। অতঃপর তাদের প্রত্যেক দলের একঅংশ কেন বের হয় না, যাতে তারা দ্বীনের গভীর জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং তাদের সম্প্রদায়কে ভীতিপ্রদর্শন করতে পারে, যখন তারা তাদের কাছে ফিরে আসবে, যাতে তারা সতর্ক হয়।” [সূরা আল-বাকারাহ: ১২২]তবে কখনো কখনো এ দাওয়াতের দায়িত্বটি ব্যক্তির উপর বর্তায়। যেমন কোনো এলাকায় একজন লোকই আছে সেখানে আর কোন দা‘ঈ নাই, (অন্যরা সাধারণ মানুষ) অথবা অন্য কোন দা‘ঈ থাকলেও এখানে একটি সমস্যা তৈরী হয়েছে যা সে লোক ছাড়া আর কারো দ্বারা বন্ধ হওয়া সম্ভব নয় অথবা কেবল যে ব্যক্তি আল্লাহর দিকে মানুষকে আহ্বান করে তার আহ্বান ছাড়া সে সমস্যাটি সমাধান করা সম্ভব নয়, এমতাবস্থায় সে ব্যক্তির উপর দাওয়াতের কাজ করা সুনির্দিষ্ট হয়ে পড়ে। শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া প্রতিটি মুসলিমের উপর ফরয। তবে এটি ফরযে কিফায়াহ; ফরযে আইন নয়।আর ফরযে আইন বা নির্দিষ্ট ব্যক্তির উপর দাওয়াত দেয়া তখনওয়াজিব হয় যখন লোকটি দাওয়াত দিতে সক্ষম এবং সে ছাড়া আর কেউদাওয়াত না দেয়। এটিই হল, সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজ হতে বাধাদেয়া, রাসূল সা. যে দীন নিয়ে এসেছে তা মানুষের নিকট পৌঁছে দেয়া, আল্লাহর রাহে জিহাদ করা এবং ঈমান ও কুরআন শেখা। (মাজমূ‘ফাতাওয়া [১৫/১৬৬])আল্লাহর দীনের প্রতি মানুষকে দাওয়াত দেয়া ফরযে কিফায়া হওয়ার প্রমাণ:আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﴿وَلۡتَكُن مِّنكُمۡ أُمَّةٞ يَدۡعُونَ إِلَى ٱلۡخَيۡرِ وَيَأۡمُرُونَ بِٱلۡمَعۡرُوفِ وَيَنۡهَوۡنَ عَنِ ٱلۡمُنكَرِۚوَأُوْلَٰٓئِكَ هُمُ ٱلۡمُفۡلِحُونَ ١٠٤ ﴾ ]ال عمران: ١٠٤[“আর তোমাদের মধ্যে এমন একটি দলযেন থাকে যারা কল্যাণের দিকে আহ্বান করবে এবং সৎকাজের নির্দেশ দেবে ও অসৎকাজে নিষেধকরবে; আর তারাই সফলকাম।” [সূর আলে ইমরান: ১০৪]শাইখ আবদুর রহমান আস-সা‘দী রহ. বলেন, এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর পক্ষ হতে বিশেষ নির্দেশ যাতে তাদের মধ্য হতে একটি জামাত এমন হয় যারা আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করার কাজে লেগে থাকবে এবং মানুষকে আল্লাহর দীনের পথ দেখাবে। আলেম ওলামাদের পক্ষ থেকে মানুষকে দীন শেখানো, ওয়াজ নছিহত করা ও বিভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ইসলামে প্রবেশ করার আহ্বান করা এবং দ্বীন থেকে দূরে সরে যাওয়া লোকদের দ্বীনের উপর অবিচল থাকার নছিহত করা, মানুষের অবস্থা সম্পর্কে খোজ-খবর নেয়া, মানুষকে ইসলামী শরীয়তেরবিধান যেমন সালাত আদায়, যাকাত প্রদান, রমযানের রোজা রাখা ও হজ করা ইত্যাদি বিধান পালনে বাধ্য করা, ওজন কম-বেশ করে কিনা তা তদারকি করা, বাজারের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা এবং মানুষকে ধোঁকা দেয়া ও মানুষেরসাথে মিথ্যা প্রতারণা করা হতেবিরত রাখা ইত্যাদি সবই ফরযে কেফায়াহ। যেমনটি আল্লাহর তা‘আলা বাণী-) وَلْتَكُنْ مِنْكُمْ أُمَّةٌ ( إلخপূর্বোল্লেখিত আয়াতটি প্রমাণকরে। অর্থাৎ তোমাদের থেকে একটি জামাত এমন হওয়া চাই যাদের দ্বারা উল্লেখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে মূল লক্ষ্য হাসিল হয়।আর এ কথা সু-স্পষ্ট যে, কোনো বিষয়ে আদেশ দেয়া দ্বারা বিষয়টি হাসিল হতে প্রাসঙ্গিক যা কিছু প্রয়োজন তার প্রতিও আদেশ হয়ে যায়। ফলে বিষয়টির হাসিল যে সব কর্মের উপর মওকুফ থাকে তাও নির্দেশের অন্তর্ভুক্ত। (দেখুন: তাফসীর আস-সা‘দী পৃ: ১৪২।)দুই- যারা বলে, কাফেররা মারা যাওয়ার পর সে আল্লাহর সামনে তোমার বিপক্ষে অভিযোগ করবে, কথাটি অনির্ভরযোগ্য; এর উপর কোনো দলীল-প্রমাণ নেই। যে সব কাফেরদের দাওয়াত দেয়া হয়, তাদের কয়েক প্রকারে ভাগ করা যায়।প্রথম প্রকার: এক ধরনের কাফের আছে, যারা এমন কোনো দেশেবসবাস করে, তার অবস্থান সম্পর্কে কেউ জানে না অথবা সহজে তার কাছে যাওয়া কোন মুসলিমের জন্য সম্ভব নয়। এ ধরনের কোন কাফের মারা গেলে তাদের কুফরের দায়-দায়িত্ব বা গুনাহ কোনো মুসলিমের উপর বর্তাবে না। কারণ, মুসলিমরা দুনিয়া জুড়েই বিদ্যমান। যেমন,যারা দাওয়াত দেয়, তাদের অনেকেই বলে, আজকে আফ্রিকার জঙ্গলে একজন মুর্তিপুজক মারা গেছে, তার দায়-দায়িত্ব মুসলিমদেরই নিতে হবে। এ ধরনেরকথা বাতিল; ইসলামী শরিয়তের সাথে এ ধরনের কথার কোনো সম্পর্ক নাই। অন্যথায় রাসূল সা. ও তার সাহাবীরাও অপরাধী হওয়া সাব্যস্ত হয়। কারণ, রাসূল সা. এর নবুওয়তের যুগে অনেক মানুষ হিন্দুস্থান, চীন ও আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন আনাচে কানাচে মারা গেছেন, তারা কি কিয়ামতের দিন মুসলিমদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারবে?! আল্লাহ তা‘আলা কি তাদের এমন দায়িত্ব দিয়েছেন যাপালন করতে তারা অক্ষম। ফলে তাদের থেকে কোনো প্রকার ত্রুটি না পাওয়া সত্ত্বেও তাদের দোষী করবেন?! রাসূল সা. আল্লাহর দীন মানুষের নিকট পৌছিয়ে দেয়ার জন্য তার সাধ্য মত প্রাণ-পণ চেষ্টা চালিয়ে যান, তিনি বিভিন্ন দেশের রাজা বাদশা ও জনগণের নিকট ইসলামের দাওয়াত দিয়ে চিঠি লিখে পাঠান এবং তিনি তার সাধ্য মত বিভিন্ন দায়ীদেরকে বিভিন্ন দেশে প্রেরণ করেন। এখানে যদি মুসলিমদের কারো গুনাহ হয় তবে সে মুসলিম লোকটি গুনাহগার হবে, যে কোনো কাফের লোককে কাফের অবস্থায় দেখেও তাকে ইসলামের দাওয়াত দেয় নি অথবা যে কাফেরটির অবস্থান সম্পর্কে জানত এবং তার কাছে যাওয়ার ক্ষমতাও তার ছিল, কিন্তু সে তাকে দাওয়াত দিতে যায় নি।দ্বিতীয় প্রকার:কতক কাফের এমন আছে, যারা ইসলামের দাওয়াত সম্পর্কে শুনেছে এবং জেনেছে। তারা এ কথা জানে যে, মুহাম্মাদসা. আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সর্ব শেষ নবী এবং তার আনিত দ্বীনের উপর ঈমান আনা ও ইসলামে প্রবেশ করা ওয়াজিব। এতটুকু জানা ও শোনা ঈমান আনার জন্য যথেষ্ট। সুতরাং, এ ধরনের কাফেরদের সাথে যখন দেখা হবে, তখনই তাদের দাওয়াত ইসলামে প্রবেশ করার জন্য দাওয়াত দেয়াও তাদের তাদের নিকট দ্বীন পৌঁছানো ওয়াজিব নয়। এ ধরনের কাফেরদের যদি দাওয়াত দেয়া না হয়, তাহলে তারা গুনাহগার হবে না। কারণ, তাদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং তাদরে উপরহুজ্জত তথা দলীল-প্রমাণাদি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। কারণ, রাসূল সা. কুরাইশদের নিকট দ্বীনের দাওয়াত পৌছিয়ে দেন এবং তাদেরকে বিভিন্ন মজলিশ ও অনুষ্ঠানে ইসলামে প্রবেশ করার নির্দেশ দেন। তারপর যখন তাদের সাথে দেখা হত, প্রতিবারই কোন কথা বলার পূর্বেই তাদের ইসলাম গ্রহণ করার দাওয়াত দিতেন না। সুহাইলইবন ‘আমরের সাথে রাসূল সা. হুদাইবিয়ার সন্ধি লিপিবদ্ধ করেন। কিন্তু তখন তাকে ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন এ ধরনের কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি। অনুরূপভাবে রাসূল সা. ইয়াহুদীদের সাথে বেচা-কেনা করেছেন, কিন্তু তখন তাদের ইসলামের দাওয়াত দেন নি।শাইখ আব্দুল আযীয ইবন বায রহ. বলেন, যখন কোনো গ্রাম ও শহর হয় এবং সেখানে এমন কোনো ব্যক্তি পাওয়া যায় যে কাফেদেরকে ইসলামে প্রবেশ করার দাওয়াত দেয় এবং তাদের দ্বীনের দাওয়াতপৌছিয়ে দেয়। তাহলে তা যথেষ্ট হবে। আর বাকীদের জন্য দাওয়াত দেওয়া সুন্নত হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ, অপরের মাধ্যমে তাদের বিপক্ষে দলীল কায়েম হয়েছে এবং আল্লাহর নির্দেশ অপরের দ্বারা বাস্তবায়িত হয়েছে।দেখুন: শাইখ বিন বায রহ. এর ফতোয়া, [৩৩২/১]সুতরাং যারা বলে, যদি কাফেরকে দাওয়াত দেয়া না হয়, তাহলে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহর সামনে মুসলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করবে, তাদের কথা সঠিক নয়। কারণ, কিয়ামতের দিন কাফের বিবাদী হওয়ার জন্য তাকে অবশ্যই একজন মুসলিমের বিপক্ষে দায়িত্বে অবহেলা করার প্রমাণ দেখাতে হবে এবং আল্লাহর সামনে নিজেকে নির্দোষ ও অপারগ প্রমাণ করতে হবে। আর এটি কখনোই সত্য প্রমাণিত হবে না। কারণ, একজন কাফেরের ঈমান আনার জন্য রাসূলসা. সম্পর্কে জানা এবং তার কথাশোনাই যথেষ্ট। কারণ, রাসূল সা.এর বাণী ব্যাপক তাতে তিনি শুধু শ্রবণ করার উপর ঈমান আনাকে ওয়াজিব করে দেন। তিনি বলেন,) وَالَّذِي نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لَا يَسْمَعُ بِي أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ يَهُودِيٌّوَلَا نَصْرَانِيٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ إِلَّا كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّار ( رواه مسلم ) 153 ( من حديث أبي هريرة رضي الله عنه .“যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ, ইয়াহূদী ও নাসারাদের মধ্যে যারাই আমার কথা শুনবে, তারপর আমি যা নিয়ে এসেছি তার উপর ঈমানা না এনে মারা যাবে সেই জাহান্নামের অধিবাসী হবে”। [মুসলিম: ১৫৩] আবু হুরাইরা রা. বর্ণিত হাদীস। সুতরাং যে সব কাফেরের নিকট ইসলামের দাওয়াত পৌঁছেছে
No comments