টুপি বা পাগরি বা মাথা ডাকা কতোটুকু জরুরী
পৃথিবীর প্রায় সকল জাতির মধ্যে মস্তকাবরণ ব্যবহারের নিয়ম
আদিকাল থেকে ছিল, আজও আছে এবং আরবদের মধ্যেও এটা ছিল।
আল্লাহ বলেন, ﺧُﺬُﻭْﺍ ﺯِﻳْﻨَﺘَﻜُﻢْ ﻋِﻨْﺪَ ﻛُﻞِّ ﻣَﺴْﺠِﺪٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর
পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১) । সেকারণ ছালাতের সময় উত্তম
পোষাক সহ টুপী, পাগড়ী প্রভৃতি মস্তকাবরণ ব্যবহার করা রাসূলুল্লাহ
(ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের অভ্যাসগত সুন্নাত ছিল। আরবদের
মধ্যে পূর্ব থেকেই এগুলির প্রচলন ছিল, যা ভদ্র পোষাক হিসাবে গণ্য
হ’ত। ইসলাম এগুলিকে বাতিল করেনি। বরং মস্তকাবরণ ব্যবহার করা
মুসলমানদের নিকট সৌন্দর্যের অন্তর্ভুক্ত।[101] রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) শুধু
টুপী অথবা টুপীসহ পাগড়ী বা টুপী ছাড়া পাগড়ী পরিধান করতেন।[102]
ছাহাবীগণ টুপী ছাড়া খালি মাথায়ও চলতেন।[103] হাসান বাছরী
বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও টুপীর উপর সিজদা করতেন।
[104] বিশেষ অবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) মাথায় বড় রুমাল ব্যবহার
করেছেন। [105] তবে তিনি বা তাঁর ছাহাবীগণ এটিতে অভ্যস্ত ছিলেন
না। বরং ইসলামের দুশমন খায়বারের ইহুদীদের অভ্যাস ছিল বিধায়
আনাস বিন মালেক (রাঃ) প্রমুখ ছাহাবীগণ এটিকে দারুণভাবে
অপসন্দ করতেন।[106] ক্বিয়ামতের প্রাক্কালে আগত দাজ্জালের
সাথে সত্তুর হাযার ইহুদী থাকবে। তাদের মাথায় বড় ‘রুমাল’ ( ﺍﻟﻄَﻴَﺎﻟِﺴَﺔ )
থাকবে বলে হাদীছে এসেছে। [107] আরবদের মধ্যে মাথায়
‘আবা’ ( ﺍﻟﻌَﺒَﺎﺀ) নামক বড় রুমাল ব্যবহারের ব্যাপকতা দৃষ্ট হয়। যা
প্রাচীন যুগ থেকে সে দেশে ভদ্র পোষাক হিসাবে বিবেচিত।[108]
তবে ছালাতের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বা ছাহাবায়ে কেরাম কখনো
বড় রুমাল মাথায় দিয়েছেন বলে জানা যায় না। এতে বরং ছালাতের
চাইতে রুমাল ঠিক করার দিকেই মনোযোগ বেশী যায় এবং এর মধ্যে
‘রিয়া’-র সম্ভাবনা বেশী থাকে। পাগড়ীর পরিমাপ বা রংয়ের কোন
বাধ্যবাধকতা নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) কালো পাগড়ী ব্যবহার করতেন।
[109] মদীনার সাতজন শ্রেষ্ঠ ফক্বীহ-এর অন্যতম শ্রেষ্ঠ তাবেঈ
বিদ্বান খারেজাহ (মৃঃ ৯৯ হিঃ) বিন যায়েদ বিন ছাবেত (রাঃ) সাদা
পাগড়ী ব্যবহার করতেন।[110] মহিলাদের মাথা সহ সর্বাঙ্গ আবৃত
রাখা অপরিহার্য। চেহারা ও দুই হস্ততালু ব্যতীত’। [111]
অতএব সূরা আ‘রাফে (৭/৩১) বর্ণিত আল্লাহর নির্দেশ পালনার্থে
পূর্বে বর্ণিত পোষাকের ইসলামী মূলনীতি সমূহ অক্ষুণ্ণ রেখে, যে
দেশে যেটা উত্তম পোষাক হিসাবে বিবেচিত, সেটাই ছালাতের সময়
পরিধান করা আবশ্যক। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
জ্ঞাতব্য : জনগণের মধ্যে পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে বেশ কিছু হাদীছ
প্রচলিত আছে। যেমন (১) ‘পাগড়ীসহ দু’রাক‘আত ছালাত
পাগড়ীবিহীন ৭০ রাক‘আত ছালাতের চেয়ে উত্তম’ (২) ‘পাগড়ী সহ
একটি ছালাত পঁচিশ ছালাতের সমান’ (৩) ‘পাগড়ীসহ ছালাতে ১০
হাযার নেকী রয়েছে’। (৪) ‘পাগড়ীসহ একটি জুম‘আ পাগড়ীবিহীন
৭০টি জুম‘আর সমতুল্য’ (৫) ফেরেশতাগণ পাগড়ী পরিহিত অবস্থায়
জুম‘আর দিন হাযির হন এবং সন্ধ্যা পর্যন্ত পাগড়ী পরিহিত
মুছল্লীদের জন্য দো‘আ করতে থাকেন’ (৬) ‘আল্লাহর বিশেষ একদল
ফেরেশতা রয়েছে, যাদেরকে জুম‘আর দিন জামে মসজিদ সমূহের
দরজায় নিযুক্ত করা হয়। তারা সাদা পাগড়ীধারী মুছল্লীদের জন্য
আল্লাহর নিকটে ক্ষমা প্রার্থনা করে থাকে’। [112]
হাদীছের নামে প্রচলিত উপরোক্ত কথাগুলি জাল ও ভিত্তিহীন।
এগুলি ছাড়াও পাগড়ীর ফযীলত বিষয়ে কথিত আরও অনেক হাদীছ ও
‘আছার’ সমাজে চালু আছে, যার সবগুলিই বাতিল, মিথ্যা ও বানোয়াট।
আল্লাহভীরু মুসলিমের জন্য এসব থেকে দূরে থাকা কর্তব্য। বর্তমানে
মুসলিম নারী-পুরুষের টুপী, পাগড়ী ও বোরক্বা-র মধ্যেও তারতম্য
দেখা যায়। এ বিষয়ে সর্বদা হুঁশিয়ার থাকতে হবে, তা যেন
অমুসলিমদের এবং মুসলিম নামধারী মুশরিক ও বিদ‘আতীদের সদৃশ না
হয়।
[101] . সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫৩৮-এর আলোচনা শেষে দ্রষ্টব্য।
[102] . যা-দুল মা‘আদ ১/১৩০ পৃঃ।
[103] . মুসলিম হা/২১৩৮, ‘জানায়েয’ অধ্যায়, ‘রোগীর সেবা’
অনুচ্ছেদ।
[104] . বুখারী, তা‘লীক্ব হা/৩৮৫, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩।
[105] . বুখারী হা/৫৮০৭, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬।
[106] . যা-দুল মা‘আদ ১/১৩৬-৩৭।
[107] . মুসলিম হা/৭৩৯২/২৯৪৪, ‘ফিতান’ অধ্যায়-৫২, অনুচ্ছেদ-২৫।
[108] . মুসলিম, মিশকাত হা/২১০ ‘ইলম’ অধ্যায়-২, পরিচ্ছেদ-১।
[109] . মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১০, ‘জুম‘আর খুৎবা ও ছালাত’
অনুচ্ছেদ; ইবনু মাজাহ হা/২৮২১-২২, ‘জিহাদ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২২।
[110] . তাবাক্বাতে ইবনে সা‘দ (বৈরূত : দার ছাদের ১৪০৫/১৯৮৫)
৫/২৬২ পৃঃ।
[111] . নূর ২৪/৩১; আবুদাঊদ, মিশকাত হা/৪৩৭২, ‘পোষাক’
অধ্যায়-২২।
[112] . আলবানী, সিলসিলা যঈফাহ ওয়াল মওযূ‘আহ, হা/১২৭-২৯,
৩৯৫।
No comments