Header Ads

Header ADS

অহিভিত্তিক তাওহিদি চেতনা

অহীভিত্তিক তাওহীদী চেতনা
আব্দুল মান্নান
* এম.এম. এম.এ, মান্দা, নওগাঁ।
মানুষ সৃষ্টির সেরা। অনেক ক্ষমতার দাপট তার। অন্যান্য
প্রাণীসহ নিজ জাতির দুর্বল অংশের উপরও সে খবরদারী করে।
গোটা পৃথিবী যেন তার হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির
উৎকর্ষে পৃথিবীতে সে এখন সুখের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছে।
অপরদিকে পৃথিবীকে ধ্বংস করার জন্য তৈরী করেছে
পারমাণবিক বোমা সহ অনেক শক্তিশালী মারণাস্ত্র। সুতরাং
সৃষ্টি, ধ্বংস, উৎকর্ষ, বিকাশ, প্রাচুর্য, ঐশ্বর্য এখন তার হাতের
নাগালে। লক্ষ্যণীয় যে, এই শক্তিধর মানুষ নিজের ইচ্ছা ও
ক্ষমতায় দুনিয়াতে আসেনি এবং চাইলেও সে এখানে চিরকাল
থাকতে পারবে না। পিতা-মাতার মিলনের প্রবল ইচ্ছা ও
সক্ষমতা, সন্তান মায়ের জরায়ুতে সুরক্ষিত অবস্থায় বেড়ে ওঠা,
শৈশবের অসহায়ত্ব, কৈশোরের দুরন্তপনা, যৌবনের প্রবল
শক্তিমত্তা, বার্ধক্যের জীর্ণতা ও অবশেষে মুহূর্তেই বিদায়
গ্রহণ কোনটিই তার নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত নয়। কে তাহ’লে এর
নেপথ্যের মহাশক্তি? কী তাঁর পরিচয় ও উদ্দেশ্য? তিনি আসলে
কী পরিমাণ ক্ষমতার অধিকারী? এ মহাবিশ্বের সৃষ্টি, ধ্বংস,
নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনায় তিনি একক ক্ষমতা সম্পন্ন, নাকি তাঁর
সহায়ক আরও অনেক শক্তির প্রয়োজন আছে? এসব প্রশ্নের
উত্তর খুঁজে বের করার দায়িত্ব প্রতিটি বিবেকবান মানুষের।
মহান আল্লাহ বলেন, ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻣْﺮُﻩُ ﺇِﺫَﺍ ﺃَﺭَﺍﺩَ ﺷَﻴْﺌﺎً ﺃَﻥْ ﻳَﻘُﻮْﻝَ ﻟَﻪُ ﻛُﻦْ ﻓَﻴَﻜُﻮْﻥُ ‘তার
ব্যাপার শুধু এই যে, তিনি যখন কোন কিছু করতে ইচ্ছা করেন,
তখন তিনি একে বলেন, ‘হও’, তখনই তা হয়ে যায়’ (ইয়াসীন
৩৬/৮২) ।
আখিরাতের ধারণা :
মানুষের মৃত্যুর পর পুনরুত্থান ঘটবে কি-না এ প্রশ্নের সাথে
স্রষ্টার অস্তিত্বের সম্পর্ক জড়িত। যুক্তি ও বিবেক সাক্ষ্য
দেয় যে, কর্মের উপযুক্ত প্রতিদান থাকা উচিত। বৈজ্ঞানিক
নিউটন বলেছেন, ‘প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত
প্রতিক্রিয়া আছে’। পবিত্র কুরআন মাজীদে এরশাদ হয়েছে,
ﻓَﺎﻟْﻴَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﺗُﻈْﻠَﻢُ ﻧَﻔْﺲٌ ﺷَﻴْﺌﺎً ﻭَﻟَﺎ ﺗُﺠْﺰَﻭْﻥَ ﺇِﻟَّﺎ ﻣَﺎ ﻛُﻨﺘُﻢْ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ‘আজকের দিনে
কারো প্রতি যুলুম করা হবে না এবং তোমরা যা করবে কেবল
তারই প্রতিদান পাবে’ (ইয়াসীন ৩৬/৫৪) । সুতরাং কর্মের যথাযথ
প্রতিদান প্রাপ্তি ধর্ম, যুক্তি ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত।
বাস্তবে আমরা দেখতে পাই ভালো বা মন্দ অনেক কর্মের
যথাযোগ্য প্রতিদান মানুষ দুনিয়াতে পায় না। এমনকি তাকে তা
দেয়াও সম্ভব হয় না। একজন মানুষ অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা
করলে নিঃসন্দেহে সে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্য আসামী। সমাজে অনেক
হত্যাকারী সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে অথবা পেশীশক্তির
প্রভাবে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত হয় না। হিটলার, মুসোলিনি ও হালাকু
খাঁর মত অনেক মানুষের নাম আমরা জানি, যারা অন্যায়ভাবে
হাযার হাযার মানুষ হত্যা করেও উপযুক্ত শাস্তি পায়নি। এক
ব্যক্তিকে হত্যার শাস্তি যদি একবার মৃত্যুদন্ড হয় তাহ’লে এক
হাযার জনকে হত্যার শাস্তি এক হাযার বার মৃত্যুদন্ড হওয়াই
বিজ্ঞান ধর্ম ও বিবেক সম্মত। এক্ষেত্রে সীমিত ক্ষমতার
অধিকারী মানুষ আল্লাহর ইচ্ছায় বড় জোর একবার মৃত্যুদন্ড
কার্যকর করতে পারে, অবশিষ্ট নয়শত নিরানববই বার পাওনা
মৃত্যুদন্ড কার্যকর কখন ও কীভাবে হবে? সে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আবার একজন মানুষের কাছে পৃথিবীর সবকিছুর চেয়ে তার
জীবনের মূল্য অনেক বেশি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, ছাহাবায়ে
কেরাম থেকে শুরু করে অসংখ্য মানুষ মানবতার কল্যাণে, দেশের
স্বার্থে, সত্যের পক্ষে নিজের জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করে
গেছেন। আমরা তাদের প্রতিদান দিতে পারিনি এবং তা সম্ভবও
নয়। এসব কর্মের উপযুক্ত প্রতিদান দেয়ার জন্য এমন এক জগৎ
অত্যাবশ্যক যেখানে তা শতভাগ কার্যকর করা সম্ভব- যার নাম
আখিরাত। এরশাদ হচ্ছে, ﺛُﻢَّ ﻟَﺎ ﻳَﻤُﻮﺕُ ﻓِﻴﻬَﺎ ﻭَﻟَﺎ ﻳَﺤْﻴَﻰ ‘অতঃপর সেথায়
সে মরবেও না, বাঁচবেও না’ (আলা ৮৭/১৩) । সেখানে যথাযথ
প্রতিদান প্রদানে সক্ষম সত্তা হ’লেন মহান আল্লাহ। তাঁর
কোন সমকক্ষ বা প্রতিপক্ষ না থাকা নিঃসন্দেহে প্রমাণিত।
প্রতিপক্ষ বা সমকক্ষ থাকলে সেখানেও বিশৃঙ্খলা অনিবার্য
হয়; তার পরের প্রতিফল দিবস অবশ্যম্ভাবী হয়ে যায়। অথচ
চূড়ান্ত প্রতিফল দিবস একাধিকবার হয় না। অতএব আখিরাত যে
চিরন্তন সত্য তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
একক ক্ষমতাসম্পন্ন সত্তা :
আল্লাহ সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী একক সত্তা। তিনি বলেন, ﺇِﻥَّ
ﺍﻟﻠﻪَ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺷَﻲْﺀٍ ﻗَﺪِﻳﺮٌ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান’
(বাক্বারাহ ২/২০) । শক্তির বৈশিষ্ট্য হ’ল একাধিক সমান শক্তি
একত্রে অবস্থান করে না। প্রতিযোগিতায় উভয় সমশক্তি
ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে তৃতীয় শক্তির উত্থান ঘটে। দুর্বলকে সবলের
অনুগত হয়ে থাকতে হয় নতুবা তাকে পদানত করে উপরে উঠতে
হয়। এর মাঝামাঝি কোন পথ নেই। মহাশক্তি এসব ব্যাখ্যারও
অনেক ঊর্ধ্বে। মহাশক্তি একাধিক হয় না। তিনি চিরন্তন স্রষ্টা,
অন্য সবকিছুই তাঁর সৃষ্টি। তিনি নিয়ন্ত্রণকারী, অন্যেরা
নিয়ন্ত্রিত। তিনি পরিচালনাকারী, সকল সৃষ্টি তাঁর দ্বারা
পরিচালিত। তিনি মুনিব, সকলে তাঁর গোলাম। তিনি দাতা,
সকলে গ্রহীতা। তিনি উপাস্য, সকলে তাঁর উপাসনাকারী। তিনি
মহাজ্ঞানী, মহাপরাক্রমশালী। আল্লাহ বলেন, ﻭَﻓَﻮْﻕَ ﻛُﻞِّ ﺫِﻱْ ﻋِﻠْﻢٍ
ﻋَﻠِﻴْﻢٌ ‘প্রত্যেক জ্ঞানীর উপরে আছে এক মহাজ্ঞানী’ (ইউসুফ
১২/৭৬) । মানুষ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার প্রয়োজনে নির্দিষ্ট
সময়ের জন্য তাঁর নিকট থেকে সামান্য জ্ঞান প্রাপ্তমাত্র।
আল্লাহ বলেন, ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﺳُﺒْﺤَﺎﻧَﻚَ ﻻَ ﻋِﻠْﻢَ ﻟَﻨَﺎ ﺇِﻻَّ ﻣَﺎ ﻋَﻠَّﻤْﺘَﻨَﺎ ﺇِﻧَّﻚَ ﺃَﻧْﺖَ ﺍﻟْﻌَﻠِﻴْﻢُ ﺍﻟْﺤَﻜِﻴْﻢُ
‘তারা (ফেরেশতারা) বলল, তুমি পবিত্র। তুমি আমাদেরকে যা
শিখিয়েছ তা ভিন্ন আমাদের কোন জ্ঞান নেই। নিশ্চয়ই তুমি
মহাজ্ঞানী, প্রজ্ঞাময়’ (বাক্বারাহ ২/৩২) । এটা মানুষের
কৃতিত্ব নয়, স্রষ্টার অনুগ্রহমাত্র। তিনি মহাবিচারক। সকল মানুষ
তাঁর নিকটে অভিযুক্ত, অপরাধী এবং বিচারের কাঠগড়ায় তাঁর
দয়ার মুখাপেক্ষী। তিনি কারো মুখাপেক্ষী নন বরং সকল
প্রয়োজনের ঊর্ধ্বে। অতএব তাঁর ক্ষমতায় কেউ অংশীদার নেই
এটাই চূড়ান্ত। আল্লাহ বলেন, ﻟَﻮْ ﻛَﺎﻥَ ﻓِﻴْﻬِﻤَﺎ ﺁﻟِﻬَﺔٌ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠﻪُ ﻟَﻔَﺴَﺪَﺗَﺎ ﻓَﺴُﺒْﺤَﺎﻥَ
ﺍﻟﻠﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺼِﻔُﻮْﻥَ ‘যদি আসমান ও যমীনে আল্লাহ ব্যতীত
অন্য উপাস্য থাকত তাহ’লে উভয়েই ধ্বংস হয়ে যেত’ (আম্বিয়া
২১/২২) । অন্যত্র বলা হয়েছে, ﻭَﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻣَﻌَﻪُ ﻣِﻦْ ﺇِﻟَﻪٍ ﺇِﺫًﺍ ﻟَﺬَﻫَﺐَ ﻛُﻞُّ ﺇِﻟَﻪٍ ﺑِﻤَﺎ
ﺧَﻠَﻖَ ﻭَﻟَﻌَﻼَ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻋَﻠَﻰ ﺑَﻌْﺾٍ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻋَﻤَّﺎ ﻳَﺼِﻔُﻮْﻥَ ‘আর তাঁর সাথে অন্য
কোন ইলাহ নেই। যদি থাকত, তবে প্রত্যেক ইলাহ স্বীয় সৃষ্টি
নিয়ে পৃথক হয়ে যেত এবং একে অপরের উপর প্রাধান্য বিস্তার
করত। তারা যা বলে তা হ’তে আল্লাহ পবিত্র’ (মুমিনূন ২৩/৯১) ।
মাধ্যমবিহীন সুপারিশ কবুলকারী সত্তা :
মানব জাতির সবল এবং দুর্বলের মাঝে মধ্যস্থতাকারী বা
সুপারিশকারীগণ মাধ্যম হিসাবে কাজ করে থাকেন। এটা মানুষের
মানবিক দুর্বলতা। কেননা তারা কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
প্রত্যেকে একে অপরের প্রতি মুখাপেক্ষী ও নির্ভরশীল। উচুঁ-
নিচু সকল মানুষের প্রয়োজন আছে, সমস্যা আছে, দুর্বলতা আছে।
ক্ষমতাসীনরা তাদের ক্ষমতা বাস্তবায়নের জন্য সহযোগী
শক্তির প্রয়োজন বোধ করেন। তেমনি দুর্বল শ্রেণী তাদের দাবী
ও চাহিদা পূরণের জন্য মধ্যস্থতাকারী বা সুপারিশকারীর
শরণাপন্ন হয়ে থাকেন। ফলে উভয় অংশের নিকট মাধ্যমের একটি
গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান স্বীকৃত। এটা ক্ষমতার বিভাজনের একটি
পর্যায়।
আল্লাহ মানুষের একক উপাস্য। তিনি সকল প্রয়োজন ও মানবিক
দুর্বলতার ঊর্ধ্বে। তাঁর ক্ষমতার প্রয়োগ, বান্দার প্রার্থনা
শ্রবণ ও চাহিদা পূরণে সহায়ক শক্তির প্রয়োজন হয় না। এটা তাঁর
একক কর্তৃত্ব। বান্দার নিকট ইবাদত পাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি
একক মর্যাদা ও সম্মানের অধিকারী। বান্দা হিসাবে সকলে তাঁর
নিকটে সমান। কোন বান্দা ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর অধিক
সন্তুষ্টি অর্জন করলে এর প্রতিদান তার প্রাপ্য। তার সম্মান ও
মর্যাদার বরকতে অন্য বান্দা উপকৃত হবে না। তাছাড়া বান্দা
পাপ ও ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। সুতরাং যারা নিজেই অপরাধী তারা
কি করে অন্যের জন্য সুপারিশ করবে? ‘কে আছে এমন, যে তাঁর
অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করবে?’ (বাক্বারাহ ২/২৫৫) ।
এর অর্থ এটা নয় যে, বান্দা নিজে ভীত-সন্ত্রস্ত হওয়া
সত্ত্বেও সে অন্যের নাজাতের উদ্দেশ্যে আল্লাহর নিকট
সুপারিশ করার জন্য অনুমতি চেয়ে নেবে এবং সুপারিশের
মাধ্যমে তাকে মুক্ত করবে। বরং একথার তাৎপর্য হ’ল আল্লাহ
যাকে নাজাত দিতে ইচ্ছা করবেন তার পক্ষে কাউকে দিয়ে
সুপারিশ করিয়ে নেওয়ার কৌশল অবলম্বন করতে পারেন। সেটা
কাকে দিয়ে ও কীভাবে তা একান্তই আল্লাহর এখতিয়ারাধীন
বিষয়। এটা বান্দার বোধগম্যের বাইরে। তবে যেসব বিষয় বান্দার
এখতিয়ারভুক্ত সেসব বিষয়ে আল্লাহর উপর ভরসা রেখে একে
অপরের নিকট সহযোগিতা চাওয়া বৈধ। যেমন- রোগীর সেবাদান,
চাকুরি, ব্যবসার লাইসেন্স, নৌকায় নদী পারাপার ইত্যাদি।
কিন্তু যেসব বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত যেমন- বান্দার
সন্তান লাভ, সমস্যা দূর করা, বিপদ মুক্তি, আখিরাতে নাজাতের
ব্যবস্থা ইত্যাদি বিষয়ে নিজে আল্লাহর নিকট দো‘আ করার
পাশাপাশি জীবিত হক্কানী বান্দার নিকট দো‘আ চাওয়া যেতে
পারে। তবে জীবিত বা মৃত কোন পীর, আওলিয়া, বুযর্গ বান্দাকে
ক্ষমতাসম্পন্ন মনে করা অথবা আল্লাহকে ক্ষমতাবান মেনে
নিয়েই তাদের নিকট সুপারিশকারী বা মাধ্যম হিসাবে শরণাপন্ন
হওয়া শিরক। মক্কার মূর্তিপূজকরা এভাবেই বলত, ﻣَﺎ ﻧَﻌْﺒُﺪُﻫُﻢْ ﺇِﻻَّ
ﻟِﻴُﻘَﺮِّﺑُﻮْﻧَﺎ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ﺯُﻟْﻔَﻰ ‘আমরা তাদের ইবাদত একমাত্র এ উদ্দেশ্যেই
করি যে, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নিকটবর্তী করে দেয়’
(যুমার ৩৯/৩) । নির্ভেজাল তাওহীদের নিঃশর্ত অনুসারী মুসলিম
এসব ভ্রান্ত আক্বীদা থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকবে এবং সে সৎ
আমলকে অসীলা হিসাবে গ্রহণ করবে।
একক বিধান দাতা :
সৃষ্টিকর্তা ভাল জানেন তাঁর সৃষ্টি কোন বিধানের মাধ্যমে
সুনিয়ন্ত্রিত থাকবে এবং চূড়ান্ত কল্যাণ লাভ করবে। তাই
আল্লাহর রুবূবিয়াতের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হ’ল তিনি বিশ্ববাসীর
জন্য উপযুক্ত ও পূর্ণাঙ্গ বিধান জারী করেছেন এবং এক্ষেত্রে
তিনি একক সত্তা। আল্লাহ বলেন, ﺍﻟْﻴَﻮْﻡَ ﺃَﻛْﻤَﻠْﺖُ ﻟَﻜُﻢْ ﺩِﻳْﻨَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﺗْﻤَﻤْﺖُ
ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ ﻧِﻌْﻤَﺘِﻲْ ﻭَﺭَﺿِﻴْﺖُ ﻟَﻜُﻢُ ﺍﻟْﺈِﺳْﻼَﻡَ ﺩِﻳْﻨًﺎ ‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের
জীবন বিধান পরিপূর্ণ করলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ
সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দ্বীন মনোনীত
করলাম’ (মায়েদা ৫/৩) । অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ﺃَﻓَﺤُﻜْﻢَ ﺍﻟْﺠَﺎﻫِﻠِﻴَّﺔِ
ﻳَﺒْﻐُﻮْﻥَ ﻭَﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺴَﻦُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻠﻪِ ﺣُﻜْﻤًﺎ ﻟِﻘَﻮْﻡٍ ﻳُﻮْﻗِﻨُﻮْﻥَ ‘তবে কি তারা জাহেলী
যুগের বিধি-বিধান কামনা করে? নিশ্চিত বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের
জন্য বিধান দানে আল্লাহ অপেক্ষা কে শ্রেষ্ঠতর?’ (মায়েদা
৫/৫০) । আল্লাহর বিধান দু’ধরনের। এক. চিরাচরিত প্রাকৃতিক
বিধান। দুই. অহি-র মাধ্যমে প্রেরিত বিধান। প্রথমটি সকলের
জন্য আম। দ্বিতীয়টি মানব ও জিন জাতির জন্য খাছ। জীবের
ক্ষুধা আছে। খেলে প্রস্রাব-পায়খানার প্রয়োজন হয়। আগুন
তাপ দিবে। পানি রসালো করবে। মানুষ পানিতে বেশিক্ষণ
বাঁচবে না। মাছ শুকনায় মারা যাবে- এসব প্রাকৃতিক বিধান
ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক সকলে মেনে চলতে বাধ্য। না
মানলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া অনুধাবন করতে পারবে। ফলে
আখিরাতে এসব বিধান অমান্যকারীর কোন জবাবদিহিতা নেই।
আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻪُ ﺃَﺳْﻠَﻢَ ﻣَﻦْ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﻤَﺎﻭَﺍﺕِ ﻭَﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻃَﻮْﻋًﺎ ﻭَﻛَﺮْﻫًﺎ ﻭَﺇِﻟَﻴْﻪِ
ﻳُﺮْﺟَﻌُﻮْﻥَ ‘আর আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে ইচ্ছায় হোক বা
অনিচ্ছায় হোক, তাঁরই অনুগত হবে এবং তাঁর দিকেই ফিরে যাবে’
(আলে ইমরান ৩/৮৩) ।
পক্ষান্তরে অহি-র বিধান আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলগণের
মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গরূপে প্রেরণ করেছেন মানব জাতির পরীক্ষার
উদ্দেশ্যে। এজন্য কিছুকালের অবকাশ প্রদান পূর্বক তাকে দেয়া
হয়েছে ইচ্ছা ও কর্মের স্বাধীনতা। ফলে এ বিধান অমান্যকারীর
জন্য তাৎক্ষণিক কোন প্রতিক্রিয়া নেই; বরং আখিরাতে
শাস্তি পাবে এবং মান্যকারী পুরস্কৃত হবে। আল্লাহ বলেন, ﻭَﻗُﻞِ
ﺍﻟْﺤَﻖُّ ﻣِﻦْ ﺭَﺑِّﻜُﻢْ ﻓَﻤَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﻓَﻠْﻴُﺆْﻣِﻦْ ﻭَﻣَﻦْ ﺷَﺎﺀَ ﻓَﻠْﻴَﻜْﻔُﺮْ ﺇِﻧَّﺎ ﺃَﻋْﺘَﺪْﻧَﺎ ﻟِﻠﻈَّﺎﻟِﻤِﻴْﻦَ ﻧَﺎﺭًﺍ ﺃَﺣَﺎﻁَ
ﺑِﻬِﻢْ ﺳُﺮَﺍﺩِﻗُﻬَﺎ ‘বল, হক তোমার রবের পক্ষ থেকে আসে। সুতরাং
তোমাদের যার ইচ্ছা সে বিশ্বাস করুক, আর যার ইচ্ছা অমান্য
করুক। আমি অত্যাচারীদের জন্য তৈরি করে রেখেছি আগুন, যার
বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে থাকবে’ (কাহফ ১৮/২৯) ।
কোন ব্যক্তি যদি নিরূপায় হয়ে কিংবা অলসতা অথবা
অজ্ঞতাবশতঃ অহি-র বিধান অমান্য করে তাহ’লে তার
ফায়ছালার বিষয়টি আল্লাহর এখতিয়ারাধীন। কিন্তু কেউ যদি
এ বিধান যথেষ্ট নয় ভেবে এর বিপরীতে বিধান রচনা করে, এর
সাথে সংযোজন অথবা বিয়োজন ঘটায় তাহ’লে সে নিজেকে
রবের আসনে অধিষ্ঠিত করল। যারা তা মেনে নিল তারা
আল্লাহকে বাদ দিয়ে ঐসব রবের গোলামী করল এবং তাঁর
বিধানের সাথে কুফরী করত নিজের নফ্সকে ইলাহ বানিয়ে নিল।
আল্লাহ বলেন, ﺍﺗَّﺨَﺬُﻭْﺍ ﺃَﺣْﺒَﺎﺭَﻫُﻢْ ﻭَﺭُﻫْﺒَﺎﻧَﻬُﻢْ ﺃَﺭْﺑَﺎﺑًﺎ ﻣِﻦْ ﺩُﻭْﻥِ ﺍﻟﻠﻪِ ‘তারা
আল্লাহর পরিবর্তে তাদের পন্ডিত ও ধর্মযাজকদের রব বানিয়ে
নিয়েছে’ (তওবা ৯/৩১) । অন্যত্র তিনি বলেন, ﺃَﺭَﺃَﻳْﺖَ ﻣَﻦِ ﺍﺗَّﺨَﺬَ ﺇِﻟَﻬَﻪُ
ﻫَﻮَﺍﻩُ ﺃَﻓَﺄَﻧْﺖَ ﺗَﻜُﻮْﻥُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﻛِﻴْﻼً ‘তুমি কি তাকে দেখ না, যে তার
প্রবৃত্তিকে ইলাহরূপে গ্রহণ করে? তবুও কি তুমি তার যিম্মাদার
হবে?’ (ফুরক্বান ২৫/৪৩) ।
অহীভিত্তিক তাবলীগ :
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻓَﺬَﻛِّﺮْ ﺑِﺎﻟْﻘُﺮْﺁﻥِ ﻣَﻦْ ﻳَﺨَﺎﻑُ ﻭَﻋِﻴْﺪِ ‘অতএব যে
আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে কুরআনের মাধ্যমে উপদেশ
দাও’ (ক্বাফ ৫০/৪৫) । রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﺑَﻠِّﻐُﻮﺍ ﻋَﻨِّﻰ ﻭَﻟَﻮْ ﺁﻳَﺔً ‘আমার
পক্ষ থেকে একটি কথা হ’লেও তা অন্যের নিকট পৌঁছে দাও’।[1]
মূলতঃ দাওয়াত ও তাবলীগের মাধ্যমেই ইসলাম সমাজে
প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। অহী-র বিধান নবী-রাসূলগণ নিজেরা
পরিপূর্ণরূপে অনুসরণ পূর্বক তার সঠিক রূপ ও ব্যাখ্যা মানুষের
নিকট তুলে ধরেছেন। এক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তন বা কমবেশি
করার অধিকার তাঁদের ছিল না। কম-বেশি করলে আল্লাহ
তাঁদেরও পাকড়াও করতেন। আল্লাহ বলেন, ﻭَﻟَﻮْ ﺗَﻘَﻮَّﻝَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺑَﻌْﺾَ
ﺍﻟْﺄَﻗَﺎﻭِﻳْﻞِ، ﻟَﺄَﺧَﺬْﻧَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﺑِﺎﻟْﻴَﻤِﻴْﻦِ، ﺛُﻢَّ ﻟَﻘَﻄَﻌْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻪُ ﺍﻟْﻮَﺗِﻴْﻦَ ‘সে যদি আমার নামে
কোন বানোয়াট কথা রচনা করতে চেষ্টা করত, তাহ’লে আমি
তার ডান হাত ধরে ফেলতাম এবং তার মূল রগ কর্তন করে
দিতাম’ (হাক্কা ৬৯/৪৪-৪৬) । রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﻣَﻦْ ﻛَﺬَﺏَ ﻋَﻠَﻰَّ
ﻣُﺘَﻌَﻤِّﺪًﺍ ﻓَﻠْﻴَﺘَﺒَﻮَّﺃْ ﻣَﻘْﻌَﺪَﻩُ ﻣِﻦَ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ‘যে আমার নামে মিথ্যা কথা বর্ণনা
করল, সে যেন জাহান্নামে তার স্থান বানিয়ে নিল’।[2]
হেদায়াতের মালিক আল্লাহ। রাসূল (ছাঃ) ছিলেন
সুসংবাদদাতা ও ভয় প্রদর্শনকারী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, ﻭَﻣَﺎ
ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮْﻝِ ﺇِﻻَّ ﺍﻟْﺒَﻼَﻍُ ﺍﻟْﻤُﺒِﻴْﻦُ ‘রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল সুস্পষ্টরূপে
পৌঁছে দেয়া’ (নূর ২৪/৫৪) । অন্যত্র তিনি বলেন, ﻓَﺈِﻧَّﻤَﺎ ﻋَﻠَﻴْﻚَ ﺍﻟْﺒَﻼَﻍُ
ﻭَﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺍﻟْﺤِﺴَﺎﺏُ ‘তোমার দায়িত্ব তো পৌঁছে দেয়া আর আমার
দায়িত্ব হিসাব নেয়া’ (রা‘দ ১৩/৪০) । একই দাওয়াতের মাধ্যমে
আবূ বকর, ওমর, ওছমান, আলী (রাঃ) হেদায়াত লাভ করে ধন্য
হ’লেন। কিন্তু আবূ জাহল, আবূ লাহাব, আবূ তালিব হেদায়াত
প্রাপ্ত হ’লেন না। এমনকি রাসূল (ছাঃ) আবূ জাহল, আবূ
তালিবকে দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য অহী-র বিধান
ব্যতীত অন্য কোন কৌশলের আশ্রয় নেননি। রাসূল (ছাঃ)-এর
অবর্তমানে ছাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈ, তাবে তাবেঈনগণ এবং
মুসলিম উম্মাহর হক্বপন্থী জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণ একই কাজ
করে থাকেন। তাঁরা শারঈ বিধান তথা কুরআন ও ছহীহ হাদীছের
পূর্ণ অনুসরণের চেষ্টা করেন এবং তা হুবহু আম জনতার নিকট
প্রচার করে থাকেন। মানুষকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে নিজস্ব
উদ্ভাবিত উছূল বা মূলনীতি, কায়দা-কৌশল, উদ্ভট কল্পকাহিনী,
রাসূল (ছাঃ) ব্যতীত মুরুববী ও বুযুর্গানে দ্বীনের অবাস্তব
উদ্ধৃতি, শরী‘আতে সংযোজন-বিয়োজন ও বিকৃতি পরিহার পূর্বক
আল্লাহকে হেদায়াত দাতা জেনে কুরআন ও ছহীহ সুন্নাহর হুবহু
প্রচার করাই প্রকৃত তাবলীগে দ্বীন। আর আম জনতার পক্ষ
থেকে সঠিক দলীলসহ কুরআন ও ছহীহ হাদীছের জ্ঞান লাভের
প্রত্যাশা করা তাবলীগে দ্বীনের ইতিবাচক সফলতা। আল্লাহ
বলেন, ﻓَﺎﺳْﺄَﻟُﻮْﺍ ﺃَﻫْﻞَ ﺍﻟﺬِّﻛْﺮِ ﺇِﻥْ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻻَ ﺗَﻌْﻠَﻤُﻮْﻥَ، ﺑِﺎﻟْﺒَﻴِّﻨَﺎﺕِ ﻭَﺍﻟﺰُّﺑُﺮِ ‘তোমরা যদি
না জান, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর স্পষ্ট দলীল-
প্রমাণ সহকারে’ (নাহল ১৬/৪৩-৪৪) । এর ব্যত্যয় ঘটলে শরী‘আত
বিকৃতির অভিযোগে আল্লাহর রুবূবিয়াত ও উলূহিয়াতে শিরকের
সংমিশ্রণ ঘটে যায়। হক্বপন্থী উম্মাহ অহীভিত্তিক দাওয়াত ও
তাবলীগের প্রতি সকলকে উদাত্ত আহবান জানায়। মিথ্যা
ফযীলতের ধোঁকায় তাদেরকে ফেলে না।
ইক্বামতে দ্বীন :
দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করা আল্লাহর নির্দেশ। আল্লাহর নির্দেশ
পালনে রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকার বাইরে যাওয়ার কারও কোন
সুযোগ নেই। আল্লাহ বলেন, ﻟَﻘَﺪْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻜُﻢْ ﻓِﻲْ ﺭَﺳُﻮْﻝِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺃُﺳْﻮَﺓٌ ﺣَﺴَﻨَﺔٌ
‘তোমাদের জন্য রাসূল (ছাঃ)-এর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ’
(আহযাব ৩৩/২১) । বান্দা সাধ্যমত রাসূল (ছাঃ)-এর তরীকায়
দ্বীন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালিয়ে যাবে। সফলতা আল্লাহর
হাতে। আল্লাহ বলেন, ﻣَﻦْ ﻳُﻄِﻊِ ﺍﻟﺮَّﺳُﻮْﻝَ ﻓَﻘَﺪْ ﺃَﻃَﺎﻉَ ﺍﻟﻠﻪَ ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﻮَﻟَّﻰ ﻓَﻤَﺎ
ﺃَﺭْﺳَﻠْﻨَﺎﻙَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﺣَﻔِﻴْﻈًﺎ ‘যে রাসূলের আনুগত্য করলে সে তো
আল্লাহরই আনুগত্য করল। আর যে মুখ ফিরিয়ে নিল, (হে রাসূল!)
তোমাকে তাদের উপর আমি তত্ত্বাবধায়ক করে প্রেরণ করিনি’
(নিসা ৪/৮০) । অন্যত্র বলা হয়েছে, ﻓَﺬَﻛِّﺮْ ﺇِﻧَّﻤَﺎ ﺃَﻧْﺖَ ﻣُﺬَﻛِّﺮٌ، ﻟَﺴْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ
ﺑِﻤُﺼَﻴْﻄِﺮٍ ‘তুমি উপদেশ দাও। তুমি তো একজন উপদেশ দাতা। তুমি
তাদের শাসক বা দারোগা নও’ (গাশিয়া ৮৮/২১-২২) ।
ব্যক্তি থেকে হয় পরিবার, সেখান থেকে সমাজ ও রাষ্ট্র।
একজন ব্যক্তিকে তার নিজের প্রতি দায়িত্ব, পরিবারের প্রতি
দায়িত্ব, অতঃপর সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য
সম্পর্কে জেনে নেয়া যরূরী। নিজের নফ্সকে শাসন করা একজন
ব্যক্তির প্রথম দায়িত্ব। নফ্স থেকে শিরক-বিদ‘আত ও তাগূতী
শক্তি দূর করে নির্ভেজাল তাওহীদ ও ইক্বামতে দ্বীন প্রতিষ্ঠা
করা ব্যক্তির প্রথম শারঈ দায়িত্ব। পরিবারকে শাসন করা
পরিবার প্রধান হিসাবে ব্যক্তির দ্বিতীয় দায়িত্ব। কেননা
প্রত্যেক পরিবার প্রধান তার পরিবারের দায়িত্বশীল। অন্যেরা
তার নিদের্শ মেনে চলবে। আল্লাহ বলেন, ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮْﺍ ﻗُﻮْﺍ
ﺃَﻧْﻔُﺴَﻜُﻢْ ﻭَﺃَﻫْﻠِﻴْﻜُﻢْ ﻧَﺎﺭًﺍ ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং
তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা
কর’ (তাহরীম ৬৬/৬) । অতঃপর সমাজে ইক্বামতে দ্বীনের
তাবলীগ করা ব্যক্তির তৃতীয় দায়িত্ব। এরশাদ হচ্ছে, ﻟِﺘُﻨْﺬِﺭَ ﺃُﻡَّ
ﺍﻟْﻘُﺮَﻯ ﻭَﻣَﻦْ ﺣَﻮْﻟَﻬَﺎ ‘যাতে তুমি মক্কাবাসী ও পার্শ্ববর্তীদের ভয়
প্রদর্শন কর’ (আনফাল ৮/৯২) । এক্ষেত্রে নিজ থেকে সমাজ বা
রাষ্ট্রকে শাসন করতে এগিয়ে যাওয়া বা ক্ষমতা নিয়ে
কাড়াকাড়ি করা ব্যক্তির দায়িত্ব নয়; বরং তা ক্ষমতার লোভ
এবং খাহেশ পূরণের অপপ্রয়াস মাত্র। এটা মোটেও শরী‘আত
সিদ্ধ নয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﺇِﻧَّﺎ ﻻَ ﻧُﻮَﻟِّﻰ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﻦْ ﺳَﺄَﻟَﻪُ، ﻭَﻻَ ﻣَﻦْ ﺣَﺮَﺹَ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ‘আমরা আমাদের এইসব (শাসন) কাজে এমন লোককে
নিয়োগ করি না যারা তা চেয়ে নেয় বা তার লোভ করে’।[3]
তবে হ্যাঁ, সমাজ যখন নিজেদের প্রয়োজনে কাউকে শাসক
হিসাবে নিয়োগ করে তখন সমাজকে অহী-র বিধানের আলোকে
শাসন করাও ঐ ব্যক্তির দায়িত্ব হয়ে যায়। যে শাসক জনগণের
চেয়ে তার স্রষ্টার নিকটে অধিক দায়বদ্ধ, ঐ শাসকের অধীনে
আনুগত্যশীল থাকা সকল নাগরিকের দায়িত্ব হয়ে পড়ে। যে
সমাজের শাসক শ্রেণীসহ অধিকাংশ জনগণ কমবেশি ঈমান-
আমলের দাবীদার হওয়া সত্ত্বেও পরস্পরে নিজ নিজ নফসের
উপর শিরক-বিদ‘আত ও তাগূতী প্রভাবমুক্ত কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা
করতে পারেনি, শিরক মুক্ত ঈমান ও বিদ‘আত মুক্ত আমলের
অধিকারী হ’তে ব্যর্থ হয়েছে, দুনিয়ার চাইতে আখিরাতকে
প্রাধান্য দিতে সচেষ্ট নয়, শাসন করার চেয়ে শাসিত হওয়াকে
প্রাধান্য দিতে না পারে ঐ সমাজে রাষ্ট্র কর্তৃক ইক্বামতে
দ্বীন প্রতিষ্ঠার ভাবনা যুক্তিসংগত ও শরী‘আত সম্মত নয়।
সমাজ ঐ পর্যায়ে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত আল্লাহর উপর ভরসা
রেখে প্রচলিত শাসকের অধীনে থেকেই নিজ নিজ দায়িত্ব ও
কর্তব্য পালন করা প্রয়োজন। শাসকের ছোট-খাট ত্রুটির
ব্যাপারে ফিৎনায় না জড়িয়ে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা সহ
শরী‘আতের সীমায় থেকে সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যেতে
হবে। সংশোধন না হ’লে দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে। দেশের
শীর্ষস্থানীয় আলেম-ওলামার দৃষ্টিতে শাসকের প্রকাশ্য কুফরী
নযরে পড়লে ঐসব আলেমদের নেতৃত্বে আন্দোলন করা বৈধ
হবে। তবে অবশ্যই মনে রাখতে হবে এতে যেন শরী‘আতের সীমা
লংঘন না ঘটে, মানবতা ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং এর পিছনে
কারও নেতৃত্বের লোভ যেন প্রকাশ না পায়।
সর্বোপরি নিজ নফ্স এবং আপন পরিবারের উপর শিরক-বিদ‘আত
ও তাগূতমুক্ত নির্ভেজাল তাওহীদ প্রতিষ্ঠা করা। অতঃপর
সমাজে অহি-র দাওয়াত, তা‘লীম ও তারবিয়াত চালিয়ে যাওয়ার
মাধ্যমে সৎ, যোগ্য, জ্ঞানী-গুণী ও নির্লোভ নেতৃত্ব তৈরির
যথাসাধ্য প্রচষ্টার নাম ইক্বামতে দ্বীন। এর অন্যথা ঘটলে
শরী‘আত বিকৃত হবে। সমাজ বিশৃংখল হবে। এটা তাওহীদে
রুবূবিয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। তাই মুসলিম উম্মাহ এ ব্যাপারে
সর্বদা সতর্ক থাকবে।
ঐক্যের চেতনা :
আল্লাহ বলেন, ﻭَﺍﻋْﺘَﺼِﻤُﻮْﺍ ﺑِﺤَﺒْﻞِ ﺍﻟﻠﻪِ ﺟَﻤِﻴْﻌًﺎ ﻭَﻻَ ﺗَﻔَﺮَّﻗُﻮْﺍ ‘তোমরা একতাবদ্ধ
হয়ে আল্লাহর রজ্জুকে অাঁকড়ে ধর। আর দলে দলে বিভক্ত হয়ো
না’ (আলে ইমরান ৩/১০৩) । সকল মুসলিম এক আল্লাহকে
বিশ্বাস, এক কুরআনের অনুসরণ এবং এক নবীর আদর্শ গ্রহণ করার
পরও তারা আজ শতধা বিভক্ত। এমনকি সকল দল নিজ নিজ
ফিরক্বাকে সঠিক মনে করে আনন্দিত। অথচ আল্লাহ বলেন, ﻭَﻻَ
ﺗَﻜُﻮْﻧُﻮْﺍ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻤُﺸْﺮِﻛِﻴْﻦَ، ﻣِﻦَ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻓَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﺩِﻳْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﺷِﻴَﻌًﺎ ﻛُﻞُّ ﺣِﺰْﺏٍ ﺑِﻤَﺎ ﻟَﺪَﻳْﻬِﻢْ
ﻓَﺮِﺣُﻮْﻥَ ‘আর তোমরা ঐসব মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না যারা
নিজেদের দ্বীনে মতভেদ সৃষ্টি করে দলে দলে বিভক্ত হয়ে
পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল রয়েছে’
(রূম ৩০/৩১-৩২) ।
অন্যত্র বলা হয়েছে, ﺇِﻥَّ ﺍﻟَّﺬِﻳْﻦَ ﻓَﺮَّﻗُﻮْﺍ ﺩِﻳْﻨَﻬُﻢْ ﻭَﻛَﺎﻧُﻮْﺍ ﺷِﻴَﻌًﺎ ﻟَﺴْﺖَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ ﻓِﻲْ ﺷَﻲْﺀٍ
‘নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে দ্বিখন্ডিত করেছে এবং
নিজেরা দলে দলে বিভক্ত হয়ে গেছে, (হে নবী!) তাদের সাথে
তোমার কোন সম্পর্ক নেই’ (আন‘আম ৬/১৫৯) ।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﺗَﻔَﺮَّﻗَﺖْ ﻋَﻠَﻰ ﺛِﻨْﺘَﻴْﻦِ ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً ﻭَﺗَﻔْﺘَﺮِﻕُ ﺃُﻣَّﺘِﻰ ﻋَﻠَﻰ ﺛَﻼَﺙٍ
ﻭَﺳَﺒْﻌِﻴْﻦَ ﻣِﻠَّﺔً ﻛُﻠُّﻬُﻢْ ﻓِﻰ ﺍﻟﻨَّﺎﺭِ ﺇِﻻَّ ﻣِﻠَّﺔً ﻭَﺍﺣِﺪَﺓً ﻗَﺎﻟُﻮْﺍ ﻭَﻣَﻦْ ﻫِﻰَ ﻳَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠﻪِ ﻗَﺎﻝَ ﻣَﺎ ﺃَﻧَﺎ
ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺃَﺻْﺤَﺎﺑِﻰ ‘আমার উম্মত তিয়াত্তর দলে বিভক্ত হবে। সবগুলো
দলই জাহান্নামে যাবে, শুধু একটি দল ব্যতীত। তারা বলল, হে
আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! সেটি কোন দল? তিনি উত্তরে বললেন,
আমি ও আমার ছাহাবীগণ যার উপরে আছি, যারা তার উপরে
টিকে থাকবে’।[4]
মানুষের বুঝ ও চিন্তার ভিন্নতা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।
তাছাড়া সত্যের বিপক্ষে শয়তানী শক্তির প্রভাব সর্বদাই
ক্রিয়াশীল। তাই বৈষয়িক ক্ষেত্রে সৃষ্ট দলাদলির ন্যায়
ইসলামেও দলাদলি থাকা অসম্ভব নয়। কিন্তু যাবতীয় বিভক্তি
পরিহার পূর্বক আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ছাঃ)-এর পক্ষ থেকে
ঐক্যের আহবান খুবই স্পষ্ট এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি সকল দলের
পরিবর্তে কেবল একটি দলের প্রতিই ইঙ্গিতবহ। সেই দলের
বৈশিষ্ট্য কি এবং সেখানে একত্রিত হওয়ার ভিত্তি কি তাও
অত্যন্ত পরিষ্কার।
ইসলামের নামে বিভিন্ন দলের উৎপত্তির প্রেক্ষাপট তালাশ
করলে দেখা যায়, রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবায়ে কেরামের মৃত্যুর পর
ইসলামের কোন একটি বিষয়কে প্রাধান্য দিতে গিয়ে অথবা
দ্বীনী মতপার্থক্যকে কেন্দ্র করে মুসলমানগণ নানা বিতর্কে
জড়িয়ে পড়েন। সেই সাথে ইহুদী খ্রিষ্টানদের চক্রান্ত,
শয়তানের কূটকৌশল, রাজনৈতিক স্বার্থদ্বন্দ্ব, দলীয় অন্ধ
তাক্বলীদ, অনর্থক যিদ, গোঁড়ামি ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে
সেগুলো গড়ে উঠেছে। তাছাড়া কুরআন হাদীছের দূরতম ব্যাখ্যা
ও যঈফ, জাল হাদীছ অবলম্বনের মাধ্যমে অনুসারীগণ কর্তৃক
ইমামগণের নামে অথবা ইসলামের কোন একটি বিষয়ের নামে
এসব ফিরক্বা সমূহের সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আজও
উপমহাদেশে একের পর এক ফিরক্বার আবির্ভাব হয়েই চলেছে।
উল্লেখ্য যে, আল্লাহ তা‘আলা এসব দ্বিধা-বিভক্তি পরিহার
পূর্বক ঐক্যের আহবান জানানোর পাশাপাশি ঐক্যের ভিত্তি
তথা বিবাদ-বিরোধের মীমাংসার ফর্মুলাও স্পষ্টভাবে জানিয়ে
দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও
আখিরাতে বিশ্বাস কর, তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর,
আনুগত্য কর রাসূলের এবং তাদের মধ্যে যারা তোমাদের মধ্যে
নির্দেশদাতা। তবে যদি কোন বিষয়ে মতভেদ ঘটে তাহ’লে তা
সোপর্দ কর আল্লাহ ও রাসূলের নিকট। এটাই উত্তম এবং অতি
উৎকৃষ্ট ব্যাখ্যা’ (নিসা ৪/৫৯) । অন্য আয়াতে বলা হয়েছে,
‘অতএব তোমার রবের শপথ! তারা ঈমানদার হবে না যতক্ষণ না
তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে তারা
ন্যায়বিচারক হিসাবে মেনে নিবে এবং তোমার মীমাংসা
সম্পর্কে নিজেদের মনে কোনরূপ সংকীর্ণতা পোষণ না করবে
এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা কবুল করে নিবে’ (নিসা ৪/৬৫) ।
রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﻣَﻦْ ﺃَﺣْﺪَﺙَ ﻓِﻰ ﺃَﻣْﺮِﻧَﺎ ﻫَﺬَﺍ ﻣَﺎ ﻟَﻴْﺲَ ﻣِﻨْﻪُ ﻓَﻬُﻮَ ﺭَﺩٌّ ‘যে
ব্যক্তি আমার এই দ্বীনে নতুন কিছু উদ্ভাবন করল যা তার
অন্তর্ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত’।[5] মনে রাখা উচিত যে,
কুরআন সন্দেহের ঊর্ধ্বে এবং আল্লাহ নিজেই তার
সংরক্ষণকারী (হিজর ১৫/৯) । হাদীছ যেহেতু কুরআনের বাস্তব
রূপ ও ব্যাখ্যা। অতএব ছহীহ হাদীছও সন্দেহের ঊর্ধ্বে। আল্লাহ
তা‘আলা মুহাদ্দিছগণের মাধ্যমে হাদীছেরও যথাযথ সংরক্ষণ
করেছেন। আমরা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণকে পাইনি।
মুহাদ্দিছগণের মাধ্যমে হাদীছ আমাদের নিকটে পৌঁছেছে।
কাজেই মুহাদ্দিছগণ যেসব হাদীছকে ছহীহ বলেছেন, সেগুলো
নির্দ্বিধায় মেনে নেয়া এবং যেগুলোকে যঈফ সাব্যস্ত করেছেন
সেগুলোকে সন্দেহযুক্ত বিবেচনায় প্রত্যাখ্যান করাই শারঈ
নীতি, ঈমানের দাবী ও ঐক্যের পথ।[6]
দ্বীন পরিপূর্ণ। আর তা হ’ল অহীয়ে মাতলূ ও গায়ের মাতলূর
সমন্বয়। ছহীহ ও সন্দেহমুক্ত বিধান দ্বারা দ্বীন পরিপূর্ণ এটাই
অহী-র দাবী। জাল, যঈফ ও প্রমাণহীন বিধানের দ্বারা আল্লাহ
তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে শিরক-বিদ‘আত ও ফির্কাবন্দীর
রাস্তা প্রশস্ত করার মাধ্যমে ইবলীসকে অট্টহাসি হাসার সুযোগ
দান করবেন, এমনটি মোটেও শরী‘আতসিদ্ধ ও বিবেকসম্মত নয়।
কাজেই মুক্তির স্বার্থে সকল বিভেদ ভুলে গিয়ে আমরা কুরআন
ও ছহীহ সুন্নাহর আলোকে সকল মাযহাবের সত্য ও প্রমাণিত
অংশটুকু মেনে নেব। ইক্বামতে দ্বীন, তাবলীগে দ্বীন, খিলাফত,
জিহাদ, ক্বিতাল সহ ইসলামের যাবতীয় বিধানকে অহী-র
বিধানের আলোকে বিচার ও গ্রহণ করব। কুরআনের সুস্পষ্ট
আয়াতগুলো বিনা ব্যাখ্যায় শর্তহীনভাবে মেনে নিয়ে অস্পষ্ট
আয়াতগুলোর দূরতম ব্যাখ্যা পরিহার করত রাসূল (ছাঃ) ও
ছাহাবায়ে কেরামের ব্যাখ্যা গ্রহণ করব। যঈফ ও জাল হাদীছ
বর্জন পূর্বক ছহীহ হাদীছ অনুসরণের মাধ্যমে একমাত্র নাজী
ফিরক্বা তথা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণের দলের অন্তর্ভুক্ত
হব-এটাই অহীভিত্তিক ঐক্যের চেতনা।
সাংস্কৃতিক চেতনা :
হক্বপন্থী মুসলিমের সাংস্কৃতিক চেতনা হবে অহীভিত্তিক।
তাদের চেতনার সাথে অনর্থক কার্যকলাপ নেই, অপচয় নেই, নেই
কার্পণ্য। বেহায়াপনা, অপসংস্কৃতি, অমুসলিম সংস্কৃতি, পশ্চিমা
সংস্কৃতি, মানব চরিত কলুষিতকারী ও নৈতিকতা বিধ্বংসী
সংস্কৃতির সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং তাদের রয়েছে
উচ্চ নৈতিকতাসম্পন্ন ইহ-পারলৌকিক কল্যাণকর পরিচছন্ন
তাওহীদী সংস্কৃতি। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ﻣَﻦْ ﺗَﺸَﺒَّﻪَ ﺑِﻘَﻮْﻡٍ ﻓَﻬُﻮَ ﻣِﻨْﻬُﻢْ
‘যে জাতি যে সম্প্রদায়ের অনুকরণ করে সে তাদেরই
অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়’।[7] রাসূল (ছাঃ), ছাহাবায়ে কেরাম ও
উম্মতের গুণী ব্যক্তিবর্গের জন্ম-মৃত্যু থেকে তারা শিক্ষা
গ্রহণ করে থাকেন। কোন দিবস পালনে তারা বিশ্বাস করেন না।
কেননা রাসূল (ছাঃ) ও ছাহাবীগণ তা শিখিয়ে যাননি। আমরা
বদর, ওহোদ, খন্দক ও মক্কা বিজয়ের চেতনায় যেমন বিশ্বাসী,
তেমনি ৪৭, ৫২, ৭১-এর চেতনায়ও গভীরভাবে আস্থাশীল। আম
জনতার সাথে আমাদের পার্থক্য চেতনার ধরনের ভিন্নতা। দেশ,
জাতি ও ভাষার জন্য, সত্যের পক্ষে যারা জীবন উৎসর্গ করে
গেছেন আম জনতা তাদের শহীদ নামে আখ্যায়িত করে মাযার ও
স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। অনেক অর্থ-কড়ি
খরচ করে অনুষ্ঠান পালন করেন, দিবস উদযাপন করতে গিয়ে
অনেক বেহায়াপনার প্রকাশ ঘটান। হক্বপন্থী মুসলিমগণ বিশ্বাস
করেন ফুল জীবিত মানুষের কাজে লাগে, তাকে আনন্দ দেয়
সম্মানিত করে। মৃত মানুষ আলমে বারযাখের অধিবাসী। ফুল
তাকে আনন্দ দেয় না, সম্মানিতও করে না। বস্তুজগতের কোন
কিছুই তাদের কাম্য নয়; বরং তারা জীবিত হিতাকাঙ্ক্ষীদের
দো‘আর প্রত্যাশী- যা তাদের কল্যাণ ও নাজাতের অসীলা
হ’তে পারে। তাই খাঁটি মুসলিমগণ তাদের প্রকৃত হিতাকাংক্ষী
হিসাবে গভীর রাতে তাহাজ্জুদ বাদ আল্লাহর নিকট দো‘আ
করে বলেন, হে আল্লাহ! যেসব ভাই-বোন সত্যের পক্ষে, দেশ ও
জাতির কল্যাণে নিজের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন, আপনি
তাদেরকে শহীদদের কাতারে স্থান দিন। তাদের কোন গোপন
অপরাধ থাকলে তা ক্ষমা করুন, কবর ও জাহান্নামের আযাব
থেকে রক্ষা করুন এবং উৎসর্গকৃত মূল্যবান জীবনের বিনিময়ে
তাদের চিরস্থায়ী জান্নাতের অফুরন্ত নে‘মত দানে ধন্য করুন-
এটাই তাদের তাওহীদী চেতনা। আজ যারা তোপধ্বনি বাজিয়ে,
নগ্ন পায়ে বিদেহী আত্মার স্মৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা
জানানোর নামে নিজেরা আত্মতৃপ্তি লাভ করছেন, তাদের
পরবর্তী প্রজন্ম আরও একটুখানি ভালো করতে গিয়ে সেখানে
ঐসব মনীষীদের মূর্তি তৈরীর পর পূজা-অর্চনা শুরু করলে অবাক
হবার কিছু থাকবে না। ইতিমধ্যেই যার প্রকাশ অনেকটাই দেখা
যাচ্ছে। মূর্তি পূজার অতীত ই

No comments

Powered by Blogger.