Header Ads

Header ADS

1.সুরাতুল ফাতিহা তাফসির আরবী থেকে বাংলা বিস্তারিত অনুবাদ

ﺑِﺴْﻢِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
(১) অনন্ত করুণাময় পরম দয়ালু
আল্লাহর নামে (আরম্ভ করছি)।
‘বিসমিল্লাহ’র পূর্বে ‘আক্বরাউ’ ‘আবদাউ’
অথবা ‘আতলু’ ফে’ল (ক্রিয়া) উহ্য আছে।
অর্থাৎ, আল্লাহর নাম নিয়ে পড়ছি অথবা শুরু
করছি কিংবা তেলাঅত আরম্ভ করছি।
প্রত্যেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ আরম্ভ করার পূর্বে
‘বিসমিল্লাহ’ পড়ার প্রতি তাকীদ করা
হয়েছে। সুতরাং নির্দেশ করা হয়েছে যে,
খাওয়া, যবেহ করা, ওযু করা এবং সহবাস
করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পড়। অবশ্য
ক্বুরআনে করীম তেলাঅত করার সময়
‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম’ পড়ার
পূর্বে ‘আউযু বিল্লাহি মিনাশ্শায়ত্বানির
রাজীম’ পড়াও অত্যাবশ্যক। মহান আল্লাহ
বলেছেন, ‘‘অতএব যখন তুমি ক্বুরআন পাঠ
করবে, তখন বিতাড়িত শয়তান থেকে
আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর।’’ (সূরা নাহল
৯৮ আয়াত)।
ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ
(২) সমস্ত প্রশংসা[1] সারা
জাহানের প্রতিপালক আল্লাহর
জন্য।[2]
[1] ﺍﻟﺤَﻤﺪ এর মধ্যে যে ﺍﻝ রয়েছে, তা ﺍﺳﺘﻐﺮﺍﻕ
(সমূদয়) অথবা ﺍﺧﺘﺼﺎﺹ (নির্দিষ্টীকরণ)এর
অর্থে ব্যবহার হয়েছে। অর্থাৎ, সমস্ত
প্রশংসা আল্লাহর জন্যই বা তাঁর জন্য
নির্দিষ্ট; কেননা প্রশংসার প্রকৃত
অধিকারী একমাত্র মহান আল্লাহই। কারো
মধ্যে যদি কোন গুণ, সৌন্দর্য এবং কৃতিত্ব
থাকে, তবে তাও মহান আল্লাহ কর্তৃক সৃষ্ট।
অতএব প্রশংসার অধিকারী তিনিই।
‘আল্লাহ’ শব্দটি মহান আল্লাহর সত্তার এমন
এক সতন্ত্র নাম যার ব্যবহার অন্য কারো জন্য
করা বৈধ নয়। ‘আলহামদু লিল্লাহ’ কৃতজ্ঞতা-
জ্ঞাপক বাক্য। এর বহু ফযীলতের কথা
হাদীসসমূহে এসেছে। একটি হাদীসে ‘লা-
ইলাহা ইল্লাল্লা-হ’কে উত্তম জিকির বলা
হয়েছে এবং ‘আলহামদু লিল্লাহ’কে উত্তম
দুআ বলা হয়েছে। (তিরমিযী, নাসায়ী
ইত্যাদি) সহীহ মুসলিম এবং নাসায়ীর
বর্ণনায় এসেছে, ‘আলহামদু লিল্লাহ’
দাঁড়িপাল্লা ভর্তি করে দেয়। এ জন্যই অন্য
এক বর্ণনায় এসেছে যে, আল্লাহ এটা পছন্দ
করেন যে, প্রত্যেক পানাহারের পর বান্দা
তাঁর প্রশংসা করুক। (সহীহ মুসলিম)
[2] ﺭَﺏّ মহান আল্লাহর সুন্দর নামসমূহের
অন্যতম। যার অর্থ হল, প্রত্যেক জিনিসকে
সৃষ্টি ক’রে তার প্রয়োজনীয় জিনিসের
ব্যবস্থা ক’রে তাকে পরিপূর্ণতা দানকারী।
কোন জিনিসের প্রতি সম্বন্ধ (ইযাফত) না
করে এর ব্যবহার অন্য কারো জন্য বৈধ নয়।
ﻋَﺎﻟَﻤِﻴْﻦ ﻋَﺎﻟَﻢ (বিশ্ব-জাহান) শব্দের বহুবচন। তবে
সকল সৃষ্টির সমষ্টিকে ﻋَﺎﻟَﻢ বলা হয়। এই
জন্যেই এর বহুবচন ব্যবহার হয় না। কিন্তু
এখানে তাঁর (আল্লাহর) পূর্ণ প্রতিপালকত্ব
প্রকাশের জন্য এরও বহুবচন ব্যবহার করা
হয়েছে। এ থেকে উদ্দেশ্য হল, সৃষ্টির ভিন্ন
ভিন্ন শ্রেণী বা সম্প্রদায়। যেমন, জ্বিন
সম্প্রদায়, মানব সম্প্রদায়, ফিরিশ্তাকুল
এবং জীব-জন্তু ও পশু-পক্ষীকুল ইত্যাদি। এই
সমস্ত সৃষ্টির প্রয়োজনসমূহও একে অপর
থেকে অবশ্যই ভিন্নতর। কিন্তু বিশ্ব-
প্রতিপালক প্রত্যেকের অবস্থা, পরিস্থিতি
এবং প্রকৃতি ও দেহ অনুযায়ী তার
প্রয়োজনীয় জিনিসের ব্যবস্থা করে
থাকেন।
ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَٰﻦِ ﺍﻟﺮَّﺣِﻴﻢِ
(৩) যিনি অনন্ত করুণাময়, পরম
দয়ালু।
ﺭَﺣﻤﺎ শব্দটি ﻓَﻌﻼﻥ এর ওজনে। আর ﺭَﺣِﻴﻢ শব্দটি
ﻓَﻌِﻴﻞ এর ওজনে। দু’টোই মুবালাগার স্বীগা
(অতিরিক্ততাবোধক বাচ্য)। যার মধ্যে
আধিক্য ও স্থায়িত্বের অর্থ পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, মহান আল্লাহ অতীব দয়াময় এবং
তাঁর এ গুণ অন্যান্য গুণসমূহের মত চিরন্তন।
কোন কোন আলেমগণ বলেছেন ‘রাহীম’-এর
তুলনায় ‘রাহমান’-এর মধ্যে মুবালাগা
(অতিরিক্ততাঃ রহমত বা দয়ার ভাগ) বেশী
আছে। আর এই জন্যই বলা হয়,
‘রাহমানাদ্দুনিয়া অল-আখিরাহ’ (দুনিয়া ও
আখেরাতে রহমকারী)। দুনিয়াতে তাঁর রহমত
ব্যাপক; বিনা পার্থক্যে কাফের ও মু’মিন
সকলেই তা দ্বারা উপকৃত হচ্ছে। তবে
আখেরাতে তিনি কেবল ‘রাহীম’ হবেন।
অর্থাৎ, তাঁর রহমত কেবল মু’মিনদের জন্য
নির্দিষ্ট হবে। ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ! ﺍﺟْﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣِﻨْﻬُﻢْ (আল্লাহ
আমাদেরকে তাঁদেরই অন্তর্ভুক্ত কর!) (আ-
মীন)
ﻣَﺎﻟِﻚِ ﻳَﻮْﻡِ ﺍﻟﺪِّﻳﻦِ
(৪) (যিনি) বিচার দিনের মালিক।
[1]
[1] যদিও দুনিয়াতে কর্মের প্রতিদান
দেওয়ার নীতি কোন না কোনভাবে চালু
আছে, তবুও এর পূর্ণ বিকাশ ঘটবে
আখেরাতে। আল্লাহ তাআলা প্রত্যেককে
তার ভাল ও মন্দ কর্ম অনুযায়ী পরিপূর্ণ
প্রতিদান শান্তি ও শাস্তি প্রদান করবেন।
অনুরূপ দুনিয়াতে অনেক মানুষ
ক্ষণস্থায়ীভাবে কারণ-ঘটিত ক্ষমতা ও
শক্তির মালিক হয়। কিন্তু আখেরাতে সমস্ত
এখতিয়ার ও ক্ষমতার মালিক হবেন একমাত্র
মহান আল্লাহ। সেদিন তিনি বলবেন, ‘‘আজ
রাজত্ব কার?’’ অতঃপর তিনিই উত্তর দিয়ে
বলবেন, ‘‘পরাক্রমশালী একক আল্লাহর
জন্য।’’
ﻳَﻮْﻡَ ﻟَﺎ ﺗَﻤْﻠِﻚُ ﻧَﻔْﺲٌ ﻟِﻨَﻔْﺲٍ ﺷَﻴْﺌًﺎ ﻭَﺍﻷَﻣْﺮُ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﻟﻠﻪِ (যেদিন
কেউ কারও কোন উপকার করতে পারবে না
এবং সেদিন সকল কর্তৃত্ব হবে আল্লাহর।)
এটা হবে বিচার ও প্রতিদান দিবস।
ﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪُ ﻭَﺇِﻳَّﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴﻦُ
(৫) আমরা কেবল তোমারই ইবাদত
করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য
চাই।
ইবাদতের অর্থ হল, কারো সন্তুষ্টি লাভের
জন্য অত্যধিক কাকুতি-মিনতি এবং পূর্ণ
নম্রতা প্রকাশ করা। আর ইবনে কাসীর (রঃ)
এর উক্তি অনুযায়ী ‘শরীয়তে পূর্ণ ভালবাসা,
বিনয় এবং ভয়-ভীতির সমষ্টির নাম হল
ইবাদত।’ অর্থাৎ, যে সত্তার সাথে ভালবাসা
থাকবে তাঁর অতিপ্রাকৃত মহাক্ষমতার কাছে
অসামর্থ্য ও অক্ষমতার প্রকাশও হবে এবং
প্রাকৃত ও অতিপ্রাকৃত শক্তি দ্বারা তাঁর
পাকড়াও ও শাস্তির ভয়ও থাকবে। এই
আয়াতে সরল বাক্য হল, ‏[ ﻧَﻌْﺒُﺪُﻙَ ﻭَﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻨُﻚَ ‏] (আমরা
তোমার ইবাদত করি এবং তোমার কাছে
সাহায্য চাই।) কিন্তু মহান আল্লাহ এখানে
ﻣﻔﻌﻮﻝ (কর্মপদকে) ﻓﻌﻞ (ক্রিয়াপদ)-এর আগে
এনে ‏[ ﺇﻳَﺎﻙَ ﻧَﻌْﺒُﺪَ ﻭَﺇﻳَﺎﻙَ ﻧَﺴْﺘَﻌِﻴْﻦُ ‏] বলেছেন। আর এর
উদ্দেশ্য বিশেষত্ব সৃষ্টি করা। (যেহেতু
আরবী ব্যকরণে যে পদ সাধারণতঃ পরে
ব্যবহার হয় তা পূর্বে প্রয়োগ করা হলে
বিশেষত্বের অর্থ দিয়ে থাকে।) সুতরাং এর
অর্থ হবে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত
করি এবং কেবল তোমারই কাছে সাহায্য
চাই।’ এখানে স্পষ্ট যে, ইবাদত আল্লাহ
ছাড়া অন্য কারো জন্য জায়েয নয়, যেমন
সাহায্য কামনা করাও তিনি ছাড়া অন্য
কারো কাছে বৈধ নয়। এই বাক্য দ্বারা
শির্কের পথ বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু যাদের
অন্তরে শির্কের ব্যাধি সংক্রমণ করেছে,
তারা লৌকিক সাহায্য প্রার্থনা ও
অলৌকিক সাহায্য প্রার্থনার মধ্যে
পার্থক্যকে দৃষ্টিচ্যুত ক’রে সাধারণ
মানুষদেরকে বিভ্রান্তিতে ফেলেছে। তারা
বলে, দেখুন! যখন আমরা অসুস্থ হই, তখন
সুস্থতার জন্য ডাক্তারের নিকট সাহায্য
চাই। অনুরূপ বহু কাজে স্ত্রী, চাকর, ড্রাইভার
এবং অন্যান্য মানুষের কাছেও সাহায্য
কামনা করি। এইভাবে তারা বুঝাতে চায়
যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্যের কাছেও সাহায্য
কামনা করা জায়েয। অথচ প্রাকৃত বা
লৌকিক সাহায্য একে অপরের নিকট চাওয়া
ও করা সবই বৈধ; এটা শির্ক নয়। এটা তো
মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত এমন এক
নিয়ম-নীতি, যাতে সমস্ত লৌকিক কার্য-
কলাপ বাহ্যিক হেতুর ভিত্তিতেই হয়ে
থাকে। এমন কি নবীরাও (সাধারণ) মানুষের
কাছে সাহায্য চেয়েছেন। ঈসা (আঃ)
বলেছিলেন, [ ﻣَﻦْ ﺃَﻧْﺼَﺎﺭِﻱ ﺇِﻟَﻰ ﺍﻟﻠﻪِ ] অর্থাৎ, কারা
আছে যারা আল্লাহর পথে আমাকে সাহায্য
করবে? (সূরা আলে ইমরান ৫২ আয়াত) আর
আল্লাহ তা’য়ালা মু’মিনদেরকে বলেন,
‏[ ﻭَﺗَﻌَﺎﻭَﻧُﻮﺍ ﻋَﻠَﻰ ﺍﻟﺒِﺮِّ ﻭَﺍﻟﺘَّﻘْﻮَﻯ ‏] অর্থাৎ, তোমরা নেকী
এবং আল্লাহভীতির কাজে একে অন্যের
সাহায্য কর। (সূরা মাইদাহ ২ আয়াত) বুঝা
গেল যে, এ রকম সাহায্য (চাওয়া ও করা)
নিষেধও নয় এবং শির্কও নয়। বরং তা
বাঞ্ছনীয় ও প্রশংনীয় কাজ। পারিভাষিক
শির্কের সাথে এর কি সম্পর্ক? শির্ক তো এই
যে, এমন মানুষের কাছে সাহায্য কামনা
করা যে বাহ্যিক হেতুর ভিত্তিতে কোন
সাহায্য করতে পারবে না। যেমন, কোন মৃত
ব্যক্তিকে সাহায্যের জন্য ডাকাডাকি
করা, তাকে বিপদ থেকে মুক্তিদাতা এবং
প্রয়োজন পূরণকারী মনে করা, তাকে ভাল-
মন্দের মালিক ভাবা এবং বিশ্বাস করা যে,
সে দূর এবং নিকট থেকে সকলের ফরিয়াদ
শোনার ক্ষমতা রাখে। এর নাম হল,
অলৌকিক পন্থায় সাহায্য চাওয়া এবং
তাকে আল্লাহর গুণে গুণান্বিত করা। আর
এরই নাম হল সেই শির্ক, যা দুর্ভাগ্যক্রমে
অলী-আওলিয়াদের মহববতের নামে মুসলিম
দেশগুলোতে ব্যাপকভাবে প্রচলিত রয়েছে।
ﺃﻋﺎﺫﻧﺎ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﻪ
তাওহীদ তিন প্রকারের। এখানে মহান
আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর তাওহীদের প্রতি
ইঙ্গিত করেছেন। তাই তাওহীদের গুরুত্বপূর্ণ
তিনটি প্রকারের কথা উল্লেখ করে দেওয়া
সঙ্গত মনে হয়। এই প্রকারগুলো হলঃ
তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ (প্রতিপালকত্বের
একত্ববাদ), তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ
(উপাস্যত্বের একত্ববাদ) এবং তাওহীদুল
আসমা অসসিফাত (নাম ও গুণাবলীর
একত্ববাদ)।
১। তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহর অর্থ হল, এই
বিশ্বজাহানের স্রষ্টা, মালিক, রুযীদাতা,
নিয়ন্তা ও পরিচালক একমাত্র আল্লাহ
তাআলা। নাস্তিক ও জড়বাদীরা ব্যতীত
সকল মানুষই এই তাওহীদকে স্বীকার করে।
এমনকি মুশরিক (অংশীবাদী)রাও এটা
বিশ্বাস করতো এবং আজও করে। যেমন
ক্বুরআন কারীমে মুশরিকদের এ তাওহীদকে
স্বীকার করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহ বলেছেন, ‘‘তুমি জিজ্ঞেস কর, কে
রুযী দান করে তোমাদেরকে আসমান থেকে
ও যমীন থেকে, কিংবা কে তোমাদের কান
ও চোখের মালিক? কে জীবিতকে মৃতের
ভিতর থেকে বের করেন এবং কেই বা মৃতকে
জীবিতের মধ্য থেকে বের করেন? কে করেন
কর্ম সম্পাদনের ব্যবস্থাপনা? তারা বলবে,
আল্লাহ।’’ (অর্থাৎ, সমস্ত কর্ম সম্পাদনকারী
হলেন আল্লাহ।) (সূরা ইউনুসঃ ৩১) অন্যত্র
বলেছেন, ‘‘যদি তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস
কর, আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি করেছে?
তাহলে তারা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ।’’ (সূরা
যুমার ৩৮) তিনি আরো বলেছেন, ‘‘জিজ্ঞেস
কর, এই পৃথিবী এবং এতে যা আছে তা কার,
যদি তোমরা জানো ? তারা ত্বরিৎ বলবে,
আল্লাহর; বল, তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ
করবে না ? জিজ্ঞেস কর, কে সপ্তাকাশ ও
মহা আরশের অধিপতি ? তারা বলবে,
আল্লাহ। বল, তবুও কি তোমরা সাবধান হবে
না । জিজ্ঞেস কর, সব কিছুর কর্তৃত্ব কার
হাতে; যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যাঁর উপর
আশ্রয়দাতা নেই, যদি তোমরা জানো ?
তারা বলবে, আল্লাহর। (সূরা মু’মিনুন ৮৪-৮৯)
এ ছাড়াও আরো অনেক আয়াত আছে।
২। তাওহীদুল উলূহিয়্যাহর অর্থ হল, সর্ব
প্রকার ইবাদতের যোগ্য একমাত্র
আল্লাহকে মনে করা। আর ইবাদত সেই সব
কাজকে বলা হয়, যা কোন নির্দিষ্ট সত্তার
সন্তুষ্টি লাভের আশায় অথবা তাঁর
অসন্তুষ্টির ভয়ে করা হয়। (অন্য কথায়ঃ
ইবাদত প্রত্যেক সেই গুপ্ত বা প্রকাশ্য কথা
বা কাজের নাম, যা আল্লাহ পছন্দ করেন ও
যাতে তিনি সন্তুষ্ট হন।) সুতরাং কেবল
নামায, যাকাত, রোযা, হজ্জই ইবাদত নয়,
বরং কোন সত্তার নিকট দুআ ও আবেদন করা
তার নামে মানত করা, তার সামনে হাত
বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকা, তার তাওয়াফ করা
এবং তার কাছে আশা রাখা ও তাকে ভয়
করা ইত্যাদিও ইবাদত। তাওহীদে উলূহিয়্যাহ
হল (উল্লিখিত) সমস্ত কাজ কেবল মহান
আল্লাহর জন্য সম্পাদিত হওয়া। কবরপূজার
ব্যাধিতে আক্রান্ত আম-খাস বহু মানুষ
তাওহীদে উলূহিয়্যাতে শির্ক করছে।
উল্লিখিত ইবাদতসমূহের অনেক প্রকারই
তারা কবরে সমাধিস্থ ব্যক্তিদের এবং মৃত
বুযুর্গদের জন্য ক’রে থাকে যা সুস্পষ্ট শির্ক।
৩। তাওহীদুল আসমা অসসিফাত হল, মহান
আল্লাহর যে গুণাবলী ক্বুরআন ও হাদীসে
বর্ণিত হয়েছে, সেগুলিকে কোন রকমের
অপব্যাখ্যা এবং বিকৃত করা ছাড়াই বিশ্বাস
করা। আর এই গুণাবলীর অনুরূপ অধিকারী
(আল্লাহ ছাড়া) অন্য কাউকে মনে না করা।
যেমন, অদৃশ্য জগতের জ্ঞান (গায়বী খবর)
রাখা তাঁর গুণ, দূর ও নিকট থেকে সকলের
ফরিয়াদ শোনার শক্তি তিনি রাখেন,
বিশ্বজাহানের নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার সব
রকমের এখতিয়ার তাঁরই; এই ধরনের আরো যত
ইলাহী গুণাবলী আছে আল্লাহ ব্যতীত কোন
নবী, ওলী এবং অন্য কাউকেও এই গুণের
অধিকারী মনে না করা। করলে তা শির্ক
হয়ে যাবে। বড় দুঃখের বিষয় যে,
কবরপূজারীদের মধ্যে এই প্রকারের শির্ক
ব্যাপক। তারা আল্লাহর উল্লিখিত গুণে
অনেক বুযুর্গদেরকে অংশীদার বানিয়ে
রেখেছে। ﺃَﻋَﺎﺫَﻧَﺎ ﺍﻟﻠﻪُ ﻣِﻨْﻪُ
ﺍﻫْﺪِﻧَﺎ ﺍﻟﺼِّﺮَﺍﻁَ ﺍﻟْﻤُﺴْﺘَﻘِﻴﻢَ
(৬) আমাদেরকে সরল পথ দেখাও;
ﺍﻫﺪِﻧَﺎ (হিদায়াত) শব্দটি কয়েকটি অর্থে
ব্যবহার হয়। যেমন, পথের দিক নির্দেশ করা,
পথে পরিচালনা করা এবং গন্তব্যস্থানে
পৌঁছিয়ে দেওয়া। আরবীতে এটাকে
‘ইরশাদ’, ‘তাওফীক্ব’, ‘ইলহাম’ এবং
‘দালালাহ’ ইত্যাদি শব্দে আখ্যায়িত করা
হয়। অর্থ হল, আমাদেরকে সঠিক পথের দিকে
দিক নির্দেশ কর, এ পথে চলার তাওফীক্ব
দাও এবং এর উপর প্রতিষ্ঠিত রাখ, যাতে
আমরা (আমাদের অভীষ্ট) তোমার সন্তুষ্টি
লাভ করতে পারি। পক্ষান্তরে সরল-সঠিক পথ
কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি দ্বারা অর্জিত হয় না।
এই সরল-সঠিক পথ হল সেই ‘ইসলাম’ যা নবী
করীম (সাঃ) বিশ্ববাসীর সামনে পেশ
করেছেন এবং যা বর্তমানে ক্বুরআন ও সহীহ
হাদীসের মধ্যে সুরক্ষিত।
ﺻِﺮَﺍﻁَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺃَﻧْﻌَﻤْﺖَ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻏَﻴْﺮِ
ﺍﻟْﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ ﻭَﻟَﺎ ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ
(৭) তাদের পথ -- যাদেরকে তুমি
নিয়ামত দান করেছ;[1] তাদের পথ
-- যারা ক্রোধভাজন (ইয়াহুদী) নয়
এবং যারা পথভ্রষ্টও (খ্রিষ্টান)
নয়। [2] (আমীন)
[1] এ হল ‘স্বিরাত্বে মুস্তাক্বীম’ তথা সরল
পথের ব্যাখ্যা। অর্থাৎ, সেই সরল পথ হল ঐ
পথ, যে পথে চলেছেন এমন লোকেরা
যাঁদেরকে তুমি নিয়ামত, অনুগ্রহ ও পুরস্কার
দান করেছ। আর নিয়ামত ও পুরস্কারপ্রাপ্ত
দলটি হল নবী, শহীদ, চরম সত্যবাদী (নবীর
সহচর) এবং নেক লোকদের দল। যেমন
আল্লাহ সূরা নিসার মধ্যে বলেছেন, ‘‘আর যে
কেউ আল্লাহ এবং রসূলের আনুগত্য করবে
(শেষ বিচারের দিন) সে তাদের সঙ্গী হবে,
যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন;
অর্থাৎ নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও সৎকর্মশীলগণ।
আর সঙ্গী হিসাবে এরা অতি উত্তম।।’’ (সূরা
নিসা ৬৯) এই আয়াতে এ কথাও পরিষ্কার
ক’রে বলে দেওয়া হয়েছে যে,
পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লোকদের পথ হল আল্লাহ
ও তাঁর রসূলের আনুগত্যের পথ, অন্য কোন পথ
নয়।
[2] কোন কোন বর্ণনা দ্বারা সুসাব্যস্ত যে,
ﻣَﻐْﻀُﻮْﺏٌ ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ (ক্রোধভাজনঃ যাদের উপর
আল্লাহর গযব নাযিল হয়েছে তারা) হল
ইয়াহুদী। আর ﺿَﺎﻟِّﻴْﻦَ (পথভ্রষ্ট) বলতে
খ্রিষ্টানদেরকে বুঝানো হয়েছে। ইবনে
আবী হাতেম বলেন, মুফাসসিরীনদের মধ্যে
এ ব্যাপারে কোন মতভেদ নেই যে, {ﺍﻟﻤَﻐْﻀُﻮﺏِ
ﻋَﻠَﻴْﻬِﻢْ } হল ইয়াহুদীরা এবং { ﺍﻟﻀَّﺎﻟِّﻴﻦَ } হল
খ্রিষ্টানরা। (ফাতহুল ক্বাদীর) তাই সঠিক
পথে চলতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য
অত্যাবশ্যক হল যে, তারা ইয়াহুদী এবং
খ্রিষ্টান উভয় জাতিরই ভ্রষ্টতা থেকে
নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখবে। ইয়াহুদীদের
সব থেকে বড় ভ্রষ্টতা এই ছিল যে, তারা
জেনে-শুনেও সঠিক পথ অবলম্বন করেনি।
তারা আল্লাহর আয়াতসমূহের বিকৃতি ও
অপব্যাখ্যা করতে কোন প্রকার কুণ্ঠাবোধ
করতো না। তারা উযাইর (আঃ)-কে আল্লাহর
পুত্র বলতো। তাদের পন্ডিত ও সাধু-
সন্নাসীদের হালাল ও হারাম করার
অধিকার আছে বলে মনে করতো। আর
খ্রিষ্টানদের সব থেকে বড় ত্রুটি এই ছিল
যে, তারা ঈসা (আঃ)-এর ব্যাপারে
বাড়াবাড়ি ক’রে তাঁকে আল্লাহর পুত্র এবং
তিনের এক সাব্যস্ত করেছে। দুঃখের বিষয়
যে, উম্মাতে মুহাম্মাদিয়ার মধ্যেও এই
ভ্রষ্টতা ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। যার
কারণে তারা দুনিয়াতে লাঞ্ছিত এবং
ঘৃণিত হচ্ছে। আল্লাহ তাআলা তাদেরকে
ভ্রষ্টতার গহ্বর থেকে বের করুন; যাতে তারা
অবনতি ও দুর্দশার বর্ধমান অগ্নিগ্রাস থেকে
সুরক্ষিত থাকে।
সূরা ফাতিহার শেষে ‘আ-মীন’ বলার
ব্যাপারে নবী করীম (সাঃ) খুব তাকীদ
করেছেন এবং তার ফযীলতও উল্লেখ
করেছেন। কাজেই ইমাম এবং মুক্তাদী
সকলের ‘আ-মীন’ বলা উচিত। নবী করীম
(সাঃ) এবং তাঁর সাহাবাগণ জেহরী (সশব্দে
পঠনীয়) নামাযগুলোতে উচ্চস্বরে এমন ভাবে
‘আ-মীন’ বলতেন যে, মসজিদ গমগম করে উঠত।
(ইবনে মাজা-ইবনে কাসীর) বলাই বাহুল্য যে,
উঁচু শব্দে ‘আ-মীন’ বলা নবী করীম (সাঃ)-এর
সুন্নত এবং সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের
কৃত আমল।
আ-মীনের কয়েকটি অর্থ বলা হয়েছে।
যেমনঃ ( ﻛَﺬَﻟِﻚَ ﻓَﻠْﻴَﻜُﻦْ ) এই রকমই হোক। ( ﻻَ ﺗُﺨَﻴِّﺐْ
ﺭَﺟَﺂﺀَﻧَﺎ ) আমাদের আশা ব্যর্থ করো না। (ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ
ﺍﺳْﺘَﺠِﺐْ ﻟَﻨَﺎ ) হে আল্লাহ! আমাদের দুআ কবুল কর।

No comments

Powered by Blogger.