কোন ব্যক্তির জন্য কি দাঁড়িয়ে পেশাব করা - জায়েয?
এ ব্যাপারে আল্লাহ্র রাসূল (ﷺ ) এর পক্ষ হতে ৫ টি
হাদীস পাওয়া যায়। এর মধ্যে ৩টি সহীহ। এর একটিতে
হযরত আয়িশা (রা.) রাসূল ( ﷺ) এর দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে
অস্বীকার করেছেন। ২য়টিতে রাসূল ( ﷺ) এর দাঁড়িয়ে
পেশাব করার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আর ৩য়টিতে বসে
পেশাব করার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। আর ২টি হাদীস যঈফ।
তার একটিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করার নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত
হয়েছে। অপরটিতে দাঁড়িয়ে পেশাব করাকে অহমিকার
সাথে বিশেষিত করা হয়েছে।
হাদীসগুলো নিম্নে বর্ণিত হলো:
ﻋَﻦْ ﻋَﺎﺋِﺸَﺔَ، ﻗَﺎﻟَﺖْ: ﻣَﻦْ ﺣَﺪَّﺛَﻜُﻢْ ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ ﷺ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺒُﻮﻝُ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻓَﻠَﺎ
ﺗُﺼَﺪِّﻗُﻮﻩُ، ﻣَﺎ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺒُﻮﻝُ ﺇِﻟَّﺎ ﻗَﺎﻋِﺪًﺍ
(১) আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: তোমাদের
মধ্যে যদি কেউ বলে যে, রাসূল (ﷺ) দাঁড়িয়ে পেশাব
করেছেন, তাহলে তোমরা তা বিশ্বাস করো না।[1]
ﻋَﻦْ ﺣُﺬَﻳْﻔَﺔَ، ﻗَﺎﻝَ: ﻛُﻨْﺖُ ﻣَﻊَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﷺ ﻓَﺎﻧْﺘَﻬَﻰ ﺇِﻟَﻰ ﺳُﺒَﺎﻃَﺔِ ﻗَﻮْﻡٍ، ﻓَﺒَﺎﻝَ
ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻓَﺘَﻨَﺤَّﻴْﺖُ ﻓَﻘَﺎﻝَ: ﺍﺩْﻧُﻪْ ﻓَﺪَﻧَﻮْﺕُ ﺣَﺘَّﻰ ﻗُﻤْﺖُ ﻋِﻨْﺪَ ﻋَﻘِﺒَﻴْﻪِ ﻓَﺘَﻮَﺿَّﺄَ
ﻓَﻤَﺴَﺢَ ﻋَﻠَﻰ ﺧُﻔَّﻴْﻪِ
(২) হুযাইফাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন: একদিন
আমি নাবী ( ﷺ) এর সঙ্গে ছিলাম। এক সময় তিনি
লোকজনের আবর্জনা ফেলার স্থানে পৌঁছলেন এবং
সেখানে দাঁড়িয়ে পেশাব করলেন। এ দেখে আমি
কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালাম। কিন্তু তিনি আমাকে নিকটে
আসতে বললেন। আমি তার কাছে এগিয়ে গেলাম।
এমনকি একেবারে তার পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। তিনি
প্রয়োজন সেরে ওযূ করলেন এবং মোজার উপর
মাসাহ করলেন।[2]
ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﺮَّﺣْﻤَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﺣَﺴَﻨَﺔَ ﻗَﺎﻝَ: ﺧَﺮَﺝَ ﻋَﻠَﻴْﻨَﺎ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ ﻭَﻓِﻲ ﻳَﺪِﻩِ
ﻛَﻬَﻴْﺌَﺔِ ﺍﻟﺪَّﺭَﻗَﺔِ، ﻓَﻮَﺿَﻌَﻬَﺎ ﺛُﻢَّ ﺟَﻠَﺲَ ﺧَﻠْﻔَﻬَﺎ، ﻓَﺒَﺎﻝَ ﺇِﻟَﻴْﻬَﺎ .
(৩) আব্দুর রহমান ইবনে হাসানাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন: রাসূল (ﷺ ) একদা আমাদের কাছে আগমন
করলেন। তাঁর হাতে চামড়ার তৈরি ঢালের মত একটি বস্ত্ত
ছিল। তিনি তা স্থাপন করলেন। এরপর তার পেছনে
বসলেন এবং সেদিকে ফিরে পেশাব করলেন।[3]
ﻋَﻦِ ﺍﺑْﻦِ ﻋُﻤَﺮَ، ﻋَﻦْ ﻋُﻤَﺮَ، ﻗَﺎﻝَ : " ﺭَﺁﻧِﻲ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﷺ ﻭَﺃَﻧَﺎ ﺃَﺑُﻮﻝُ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ،
ﻓَﻘَﺎﻝَ : ﻳَﺎ ﻋُﻤَﺮُ ﻟَﺎ ﺗَﺒُﻞْ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﻓَﻤَﺎ ﺑُﻠْﺖُ ﻗَﺎﺋِﻤًﺎ ﺑَﻌْﺪُ
(৪) ইবনে উমার বর্ণনা করেন: উমার (রাঃ) বলেন, একদা
রাসূল ( ﷺ) আমাকে দাঁড়িয়ে পেশাব করতে দেখলে
তিনি আমাকে বললেন: হে উমার! দাঁড়িয়ে পেশাব করো
না। উমার (রাঃ) বলেন, এর পর থেকে আমি আর কখনও
দাঁড়িয়ে পেশাব করি নি।[4]
ﻋﻦ ﺑﺮﻳﺪﺓ ﺃﻥ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻗﺎﻝ " ﺛﻼﺛﺔ ﻣﻦ ﺍﻟﺠﻔﺎﺀ: ﺃﻥ ﻳﺒﻮﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻗﺎﺋﻤﺎ,
ﺃﻭ ﻳﻤﺴﺢ ﺟﺒﻬﺘﻪ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﻳﻔﺮﻍ ﻣﻦ ﺻﻼﺗﻪ, ﺃﻭ ﻳﻨﻔﺦ ﻓﻰ ﺳﺠﻮﺩﻩ"
(৫) বুরাইদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল ( ﷺ) বলেন: তিনটি
কাজ অহমিকার অন্তর্ভর্ুক্ত। দাঁড়িয়ে পেশাব করা, সালাত
সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই কপাল মুছা ও সাজদার সময় ফুঁক
দেয়া।[5]
আমার বক্তব্য: এ সমস্ত হাদীসগুলোর কারণে
বিদ্বানগণ দাঁড়িয়ে পেশাব করার হুকুমের ব্যাপারে
মতভেদ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনটি অভিমত পাওয়া যায়
[6]
১ম অভিমত : কোন ওযর ছাড়া দাঁড়িয়ে পেশাব করা মাকরূহ।
এটা আয়িশা, ইবনে মাসউদ ও উমার এর দু’টি অভিমতের
মধ্যে একটি অভিমত। আবূ মূসা, শা’বী, ইবনে উয়াইনা,
হানাফী ও শাফেঈগণ এ অভিমত পোষণ করেছেন।
২য় অভিমত : এটা সাধারণভাবে জায়েয। উমার (রাঃ) অন্য এক
বর্ণনা মতে এ অভিমত পোষণ করেছেন। আলী,
যায়েদ বিন ছাবিত, ইবনে উমার, সাহল ইবনে সাদ, আনাস,
আবূ হুরাইরা ও হুযাইফা (রাঃ) এ মতামত ব্যক্ত করেছেন।
হাম্বলীগণ এ মতের অনুসারী।
৩য় অভিমত: যদি এমন নরম জায়গায় পেশাব করা হয় যেখান
থেকে পেশাব শরীরে ছিটকে আসা সম্ভব নয়
তাহলে দাঁড়িয়ে পেশাব করা যাবে। নচেৎ যাবে না। এটা
ইমাম মালিকের অভিমত। ইবনে মুনযির এ মতটিকে প্রাধান্য
দিয়েছেন।
আমার বক্তব্য: বিশুদ্ধ মতামত হলো, যদি পেশাব
শরীরে ছিটকে এসে পড়ার সম্ভাবনা না থাকে, তাহলে
দাঁড়িয়ে পেশাব করা মাকরূহ নয়। এর কারণ নিম্নরূপ-
(১) এর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে মহানাবী (ﷺ) থেকে
কোন সহীহ বর্ণনা পাওয়া যায় না।
(২) মহানাবী (ﷺ ) এর বসে পেশাব করাটা দাঁড়িয়ে পেশাব
করা জায়েয হওয়াকে বাধা দেয় না। বরং উভয়টিই বৈধ
হওয়াকেই সমর্থন করে।
(৩) মহানাবী (ﷺ ) থেকে দাঁড়িয়ে পেশাব করার হাদীস
সাব্যাস্ত হয়েছে।
(৪) মূলতঃ আয়িশা এর পক্ষ থেকে মহানাবী ( ﷺ) এর
দাঁড়িয়ে পেশাব করার ব্যাপারে যে অস্বীকৃতি জ্ঞাপন
করা হয়েছে তা ছিল তাঁর বাড়িতে থাকা অবস্থায়। তাই তিনি শুধু
দাঁড়িয়ে পেশাব না করার ব্যাপারেই জানতেন। সুতরাং তা
বাইরে দাঁড়িয়ে পেশাব করার ঘটনাকে না বোধক করে
না। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, কোন বিষয়ে
জ্ঞান না থাকাটা কোন জ্ঞানকে না বোধক করে না। এ
বিষয়ে হুযাইফাসহ অন্যরা জানতেন। সুতরাং, এটা যারা
জানতেন না তাদের উপর প্রমাণ। আর হাঁ বোধক বিষয় না-
বোধকের উপর প্রধান্য পায়। আল্লাহ্ই ভাল জানেন!
[1] সহীহ লিগাইরিহী; তিরমিযী (১২), নাসাঈ ১/২৬ ইবনে
মাজাহ হা/ ৩০৭, আহমাদ ৬/১৩৬। [2] বুখারী হা/ ২২৬; মুসলিম
হা/২৭৩; প্রভৃতি। [3] সহীহ; আবূ দাউদ হা/ ২২, নাসাঈ ১/২৭;
ইবনে মাজাহ হা/ ৩৪৬; আহমাদ ৪/১৯৬। [4] যঈফ: ইবনে
মাজাহ ৩০৮; বায়হাক্বী ১/২০২; হাকেম ১/১৮৫;ইমাম
তিরমিযী (রহঃ) মুয়ালস্নাক্ব সূত্রে বর্ণনা করেছেন এবং
তাকে যঈফ বলেছেন (আহওয়াযী ১/৬৭)। [5] মুনকার;
ইমাম বুখারী তারীখে (৪৯৬) উল্লেখ করেছেন,
বায্যার (১/৫৪৭), ইমাম বুখারী ও তিরমিযী (রহঃ)
হাদীসটিকে মুনকার বলেছেন। মূলতঃ এটা ইবনে
মাসউদের উক্তি হিসেবে সাব্যসত্ম। [6] মাজমূ (২/৯৮),
ওয়াসত (১/৩৩৩)
No comments