বিয়ের আগে নারী-পুরুষের প্রেম সম্পর্কে ইসলাম কি বলে ??
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর
রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু
আল্লাহর নামে শুরু করছি।
বিবাহ পূর্ব প্রেম হারাম। আল্লাহ বলেন -
• "তোমাদের জন্যে হালাল সতী-সাধ্বী মুসলমাননারী এবং তাদের সতী-সাধ্বী নারী, যাদেরকে
কিতাব দেয়া হয়েছে তোমাদের পূর্বে, যখন তোমরা
তাদেরকে মোহরানা প্রদান কর তাদেরকে স্ত্রী
করার জন্যে, কামবাসনা চরিতার্থ করার জন্যে
কিংবা গুপ্ত প্রেমে লিপ্ত হওয়ার জন্যে নয়।" (সূরা
মায়িদা : ৫)
সুতরাং তারা স্বাধীনভাবে লালসা পূরণ কিংবা
গোপনে লুকিয়ে প্রেমলীলা করবে না ।
পর্দার আয়াতে আল্লাহ বলেন -
• মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে
এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের
জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে
আল্লাহ তা অবহিত আছেন। (সূরা নুর 30)
এখানে পুরুষদের চোখ নীচু রাখতে এবং লজ্জা স্থান
হিফাজত করতে বলা হয়েছে।
• "ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের
দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত
করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া
তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন
তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং
তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর
পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক
অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক,
যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের
ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে,
তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার
জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই
আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম
হও।" (সূরা নুর 31)
এখানে নারীদেরও একই কথা বলা হয়েছে, পর্দা করার
কথা বলা হয়েছে আর নারীরা কাদের সাথে সাক্ষাত
করতে পারবে তাদের একটা তালিকা দেওয়া হয়েছে
• হে নবী পত্নীগণ! তোমরা অন্য নারীদের মত নও; যদি
তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, তবে পরপুরুষের সাথে
কোমল ও আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে কথা বলো না, ফলে সেই
ব্যক্তি কুবাসনা করে, যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে
তোমরা সঙ্গত কথাবার্তা বলবে। (সূরা আহযাব 32)
• হে নবী! আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে
এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের
চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে
তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত
করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু। (সূরা
আহযাব 33:59)
এখানে পর্দাকরার নির্দেশ আরো পরিস্কার ভাষায়
বলা হয়েছে। নবীপত্নীদের উল্লেখ করা হলেও তা
সকল মুসলিম নারীর উপর প্রযোজ্য ।
যেখানে দৃষ্টি নীচু ও সংযত রাখা,কোমল ভাবে কথা
না বলা, লজ্জা স্থান হিফাজত করার কথা এবং পর্দা
করার কথা বলা হয়েছে আর সূরা মায়িদাতে গোপন
প্রেমলীলাকে নিষেধ করা হয়েছে সেখানে বিবাহ
পূর্ব প্রেম বৈধ হতে পারে কি করে? এটা হারাম।
ব্যভিচারের ব্যপারে আল্লাহ আরো বলেন ।
• আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা
অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সূরা বনী ইসরাইল 32)
জিনার নিকট যাওয়াই নিষেধ অর্থাৎ যে সকল জিনিস
জিনার নিকটবর্তী করে দেয় তার কাছে যাওয়াই
নিষেধ। বিবাহ পূর্ব প্রেম নর-নারীকে জিনার
নিকটবর্তী করে দেয় আর জিনা মারাত্মক একটি
কবিরা গুণাহ।আল্লাহ বলেন -
• এবং যারা আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যের এবাদত
করে না, আল্লাহ যার হত্যা অবৈধ করেছেন, সঙ্গত
কারণ ব্যতীত তাকে হত্যা করে না এবং ব্যভিচার
করে না। যারা একাজ করে, তারা শাস্তির সম্মুখীন
হবে। কেয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দ্বিগুন হবে এবং
তথায় লাঞ্ছিত অবস্থায় চিরকাল বসবাস করবে। (সূরা
ফুরকান 68- 69)
বিবাহপূর্ব প্রেম অনেক সময় বান্দাহকে শিরকের
নিকটবর্তী করে দেয়। কারণ অনেক সময় তারা একে
অপরকে এতটাই ভালবাসা শুরু করে দেয় যে প্রকার
ভালবাসা পাওয়ার দাবীদার একমাত্র আল্লাহ।
আল্লাহ বলেন -
• আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে
আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি
তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি
ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি
ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী।
আর কতইনা উত্তম হ’ত যদি এ জালেমরা পার্থিব কোন
কোন আযাব প্রত্যক্ষ করেই উপলব্ধি করে নিত যে,
যাবতীয় ক্ষমতা শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য এবং
আল্লাহর আযাবই সবচেয়ে কঠিনতর। ( সূরা বাকারা
165)
ছেলে ও মেয়েদের মধ্যে প্রেম তৈরি হবে তখনই যখন
তারা দুজনই হিজাব ভঙ্গ করলে । কোন একজন যদি
হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ না করে তবে কোন মতেই
প্রেম দাঁড়াবে না । যেসব ছেলে মেয়ের অন্তরে
আল্লাহর ভয় আছে তারা হিজাব কোনমতেই ভঙ্গ করে
না । মনে মনে কাউকে ভাল লাগলেও তারা হিজাব
ভঙ্গ করে পথচ্যুত হয় না । হিজাব মানে শুধু পোশাক নয়
। পোষাক থকে আচার- আচরণ পর্যন্ত সব কিছুই এর
অন্তর্ভূক্ত । তারা বিয়ের প্রস্তাব দেয় তা না হলে
সবর করে ।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের মুসলিম ভাই ও
বোনদের এই হারাম কাজ থেকে হিফাজত করুন।
আশা করি উত্তরটি পেয়েছেন
No comments