ইসলামের দৃস্টিতে কাকে বা কাদের কে বিয়ে করা হারাম?
আমরা মুসলিম। কুরআন আমাদের জন্য পূর্ণাঙ্গ
জীবন ব্যবস্থা । যাতে লিপিবদ্ধ রয়েছে
মানুষের সব করনীয় তথা হালাল-হারাম, উচিত-
অনুচিতসহ সব বিধি-বিধান। একজন মানুষ তখনই
পরিপূর্ণ মুমিন হয় যখন সে বিবাহ করার মাধ্যমে
জীবন-যাপন করে। কুরআন ও হাদিসের ভাষ্যও
তাই। কিন্তু বিবাহ করবেন কাকে। আর বিবাহ
করায় রয়েছে কিছু বিধি-বিধান।
যাদের বিবাহ করা হরাম-
আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেন- তোমাদের
জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের ১. মাতা,
২. তোমাদের কন্যা, ৩. তোমাদের বোন, ৪.
তোমাদের ফুফু, ৫. তোমাদের খালা, ৬.
ভ্রাতৃকণ্যা; ৭. ভগিনীকণ্যা, ৮.তোমাদের সে
মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান
করিয়েছে, ৯. তোমাদের দুধ-বোন, ১০.
তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, ১১. তোমরা
যাদের সঙ্গে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা
যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি
তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ
বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই, ১২.
তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং ১৩.
দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা
অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী,
দয়ালু। এবং ১৪. অন্যের বৈধ স্ত্রীকে বিবাহ
করা হারাম।
বংশগত সম্পর্কে যারা হারাম-
০১. আপন জননীদের বিয়ে করা হারাম। এখানে
দাদি, নানি সবার ক্ষেত্রে এ বিধান
প্রযোজ্য।
০২. স্বীয় ঔরসজাত কন্যাকে বিয়ে করা
হারাম। এখানে পৌত্রী, প্রপৌত্রী,
দৌহিত্রী, প্রদৌহিত্রী তাদেরও বিয়ে করা
হারাম।
০৩. সহোদরা ভগ্নিকে বিয়ে করা হারাম।
এমনইভাবে বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী
ভগ্নিকেও বিয়ে করা হারাম।
০৪. পিতার সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও
বৈপিত্রেয়ী বোনকে (ফুফুকে) বিয়ে করা
হারাম।
০৫. আপন জননীর সহোদরা, বৈমাত্রেয়ী ও
বৈপিত্রেয়ী বোনকে (খালা) বিবাহ করা
হারাম।
০৬. ভ্রাতুষ্পুত্রীর সঙ্গেও বিয়ে হারাম, আপন
হোক, বৈমাত্রীয় হোক।
০৭. বোনের কন্যা, অর্থাৎ ভাগ্নিকে বিয়ে
করা হারাম। চাই সে বোন সহোদরা,
বৈমাত্রেয়ী ও বৈপিত্রেয়ী যেকোনো ধরনের
বোনই হোক না কেন, তাদের কন্যাদের বিবাহ
করা ভাইয়ের জন্য বৈধ নয়।
বৈবাহিক সম্পর্কে যারা হারাম-
০১. স্ত্রীদের মাতাগণ (শাশুড়ি) স্বামীর জন্য
হারাম। এতে স্ত্রীদের নানি, দাদি সবার জন্য
এ বিধান প্রযোজ্য।
০২. নিজ স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের পর সহবাস
করার শর্তে ওই স্ত্রীর অন্য স্বামীর ঔরসজাত
কন্যাকে বিবাহ করা হারাম।
০৩. পুত্রবধূকে বিয়ে করা হারাম। পুত্র শব্দের
ব্যাপকতার কারণে পৌত্র ও দৌহিত্রের
স্ত্রীকে বিবাহ করা যাবে না।
০৪. দুই বোনকে বিবাহের মাধ্যমে একত্র করা
অবৈধ, সহোদর বোন হোক কিংবা বৈমাত্রেয়ী
বা বৈপিত্রেয়ী হোক, বংশের দিক থেকে
হোক বা দুধের দিক থেকে হোক- এ বিধান
সবার জন্য প্রযোজ্য। তবে এক বোনের চূড়ান্ত
তালাক ও ইদ্দত পালনের পর কিংবা মৃত্যু হলে
অন্য বোনকে বিবাহ করা জায়েজ।
স্তন্যপানজনিত কারণে যাদের বিবাহ করা
হারাম-
কুরআনে বর্ণিত দুধমাতাও দুগ্ধবোনকে বিবাহ
করা হারাম। এর বর্ণনা হলো- দুধপানের
নির্দিষ্ট সময়কালে (দুই বছর) কোনো বালক
কিংবা বালিকা কোনো স্ত্রীলোকের দুধ পান
করলে সে তাদের মা এবং তার স্বামী তাদের
পিতা হয়ে যায়। এ ছাড়া সে স্ত্রীলোকের
আপন পুত্র-কন্যা তাদের ভাইবোন হয়ে যায়।
অনুরূপ সে স্ত্রীলোকের বোন তাদের খালা
হয়ে যায় এবং সে স্ত্রীলোকের ভাশুর ও
দেবররা তাদের কাকা হয়ে যায়। তার স্বামীর
বোনরা শিশুদের ফুফু হয়ে যায়। তাদের সবার
সঙ্গে বৈবাহিক অবৈধতা স্থাপিত হয়। বংশগত
সম্পর্কের কারণে পরস্পর যেসব বিবাহ হারাম
হয়, দুধপানের সম্পর্কের কারণেও সেসব
সম্পর্কীয়দের সঙ্গে বিবাহ অবৈধ হয়ে যায়।
তবে...
খালাতো, মামাতো, ফুফাতো বা চাচাতো বোন
তাদের মধ্যকার কেউ নন। অতএব, তাদেরকে
বিবাহ করা বৈধ। এমনকি, চাচা মারা গেলে বা
তালাক দিয়ে দিলে চাচীকে বিবাহ করার
বৈধতাও ইসলাম দিয়েছে।
পরিশেষে...
আল্লাহ আমাদের কুরআন ও হাদিসের
ভিত্তিতে যাদের বিবাহ করা হারাম,
তাদেরকে যথাযোগ্য মর্যাদা দিয়ে আল্লাহ
বিধানের প্রতি আমল করার তাওফিক দান করুন।
ইসলামি হুকম-আহকাম মেনে চলার তাওফিক
দান। আমিন।
No comments